About Us | Contact Us |

সত্যজিৎ রায়ের ফ্রেমে মহা"নায়ক" উত্তম কুমার

লিখেছেন : নিচিতা ঝা
সত্যজিৎ রায়ের ফ্রেমে মহা


মনে আছে শেষ কবে নিজের সঙ্গে একা ছিলেন? কোনও ফোন ছিল না, কোনও মুখোশ ছিল না—শুধু আপনি আর আপনার চিন্তা? সত্যজিৎ রায়ের “নায়ক” ঠিক তেমন এক মুহূর্ত এনে দেয়। ট্রেনের জানালায় বয়ে যাওয়া প্রকৃতির মতই, ছবির প্রতিটি দৃশ্য বয়ে আনে আত্মসমীক্ষার ঢেউ। এ যেন সময়ের ফাঁকে নিজেকে চিনে নেওয়ার সুযোগ।

১৯৬৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিতে, উত্তম কুমার অভিনয় করেছেন বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেতা অরিন্দম মুখার্জীর চরিত্রে—একজন তারকা, যিনি বাহ্যিক মোহজালে আটকে থাকলেও ভেতরে চলেছে নিরব এক সংগ্রাম। একটি ট্রেনযাত্রার পটভূমিতে, আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে তিনি নিজের মুখোশ খুলে ফেলেন, আর ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয় এক তারকার মানুষের রূপ।

এই সিনেমার সৌন্দর্য, তার নির্লিপ্ত ভাষায়। কোথাও উচ্চস্বরে অনুতাপ নেই, কোথাও নায়কের বীরত্ব নেই। আছে কিছু স্বপ্নভঙ্গ, কিছু স্মৃতি, কিছু অপরাধবোধ—যেগুলো সাধারণ মানুষের মতোই বাস্তব। অরিন্দমের অতীতের ফ্ল্যাশব্যাকে আমরা দেখি ক্ষমতার মায়া, শিল্পের সঙ্গে আপোষ, বন্ধুত্বের বিশ্বাসভঙ্গ—যা এক সাধারণ মানুষেরও জীবনের অংশ।

সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনা যেমন সূক্ষ্ম, তেমনি দৃঢ়। তাঁর ক্যামেরা কখনও কারও দিকে আঙুল তোলে না, বরং আয়নার মতো সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। প্রত্যেক দৃশ্য, প্রতিটি সংলাপ—সবই যেন পরিমিত, কিন্তু গভীর।

এই ছবির হৃদয়জুড়ে আছেন উত্তম কুমার। তাঁর অরিন্দম চরিত্রে একসঙ্গে দুই মানুষ ধরা পড়ে—একজন গ্ল্যামারাস নায়ক, আরেকজন ভীত, একাকী মানুষ। তাঁর চোখের ভাষা, মুখের অভিব্যক্তি, একেকটা বিরতির ভেতরেও গল্প বলে যায়। “নায়ক” তাঁর অভিনয়জীবনের এক মাইলফলক—যেখানে তিনি শুধু ‘নায়ক’ নন, নিজেকেও খুঁজে ফেরেন।

ছবিতে শর্মিলা ঠাকুরের ‘আচলা’ চরিত্রটি যেমন নায়কের আত্মসমালোচনার আয়না হয়ে দাঁড়ায়, তেমনি সিনেমাটির একমাত্র বাস্তবের ভরকেন্দ্রও বটে। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনগুলো দর্শককেও ভাবিয়ে তোলে—তারকা হওয়া মানেই কি সফলতা? নাকি তার মানে আরও একাকীত্ব?

“নায়ক” মূলত আত্মসমালোচনার ছবি। এখানে নায়কত্ব ধরা পড়ে, কিন্তু তার মধ্যে দিয়ে মানুষটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এটা কোনও চটকদার জীবনের জয়গান নয়—বরং তার আড়ালের নিরব কষ্ট, পিছু হটার যন্ত্রণা আর অসহায়তার ছায়াছবি।

এই সিনেমা কোনও তাত্ক্ষণিক উত্তেজনা দেয় না। বরং শেষে মনে হয়—সব আলোয় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোও মাঝেমাঝে একটা নিভৃত কোণ খোঁজে, যেখানে তারা নিজের মতো করে নিঃশ্বাস নিতে পারে।

“নায়ক” হলো সেই চলচ্চিত্র, যা দেখার পর মাথায় থেকে যায় না, বরং মনে গেঁথে যায়। এক নায়ককে দেখে যেন আমরা নিজের জীবনটা একটু নতুন করে ভাবি—সফলতা, ব্যর্থতা, স্বপ্ন আর নিজের সঙ্গে বোঝাপড়ার প্রশ্নগুলোকে আরও স্পষ্ট করে দেখি।

নিচিতা ঝা
নিচিতা ঝা

স্নাতক অর্থনীতি তৃতীয় বর্ষ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়

গল্প হলেও সত্যি

04 July, 2025 | : মীর রাকেশ রৌশান

স্মৃতির শহর মুর্শিদাবাদ

04 July, 2025 | : ফারুক আব্দুল্লাহ