About Us | Contact Us |

হিন্দুত্ববাদীদের দ্বারা চরম আক্রান্ত আজ বাঙালি

লিখেছেন : ওয়াহেদ মির্জা
হিন্দুত্ববাদীদের দ্বারা চরম আক্রান্ত  আজ বাঙালি


স্বাধীনতার সময় থেকেই ভাষিক আগ্ৰাসনের শিকার হয়ে আসছে বাংলা ও বাঙালি৷আমরা জানি দেশ বিভাজন এবং স্বাধীনতার ফলে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অখণ্ড বাংলা ও পাঞ্জাব৷আবার স্বাধীন ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ‍্যের বাঙালিদের কোণঠাসা করে রাখার অশুভ চক্রান্ত অবিরাম চলছে হিন্দুত্ববাদীরা৷ ভারতে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ও মিডিয়া গুলো আবার বেশিরভাগ উচ্চবর্ণের দ্বারা পরিচালিত৷ফলে বর্ণবাদ ও গণতন্ত্র এক সঙ্গে চলতে চলতে তার ভিতরে জন্ম নিয়েছে ইসলামীফোবিয়া যা আজকে রূপ ধারণ করেছে বাঙালিফোবিয়া নামে৷বাংলা ভাগ হয়েছিল রাজনৈতিক হিন্দুত্ববাদীদের কারণে আর  আজকে আবার বাঙালির উপর  চরম অত‍্যাচার চলছে হিন্দুত্ববাদীদের দ্বারা৷বুঝতে পারছেন বাঙালির আসল শত্রু বরাবরই "হিন্দুত্ববাদীরা"৷ অথচ "  হিন্দুত্ববাদ " কে আড়াল করে চলছে সমস্ত আলোচনা ও আন্দোলন এবং ঠুনকো বাঙালি জাতির ঐক্য৷বাঙালি মন ও মননে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন RSS এর প্রভাব প্রবল ভাবে বিস্তার করছে ৷ ফলে আজকের দিনে বাংলায় RSS এর সদস্য সংখ্যা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় ৷বাংলায় হিন্দুত্ববাদীদের শিকড় লুকিয়ে আছে অনেক গভীরে ৷ সাহিত্যিক  ,সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ভাবে  বাঙালি মুসলমানকে " অপর " বলে নির্মাণ করে আসছে ৷ ফলে আজকে বাঙালি মুসলমানকে 
"বাংআলী " ও  "বাংলাভাষী"বলে এবং কখনও নাম ও ভাষা (শ্রমজীবি মানুষের মুখের ভাষা)- র উপর বাঙালিত্ত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে৷বাঙালি মুসলমানদের পোশাক আশাক ,আচার ব‍্যবহার নিয়েও বাঙালি কি বাঙালি নয় ,তা নিয়ে সঙ্ঘা নির্ধারণ করে আসছে বাংলার ব্রাম্মণ‍্য ভাবধারা  ও আধুনিক  হিন্দু মনও৷বাঙালিরা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী,  চীনা এবং আরব জাতিগোষ্ঠীর পরেই বাঙালিদের স্থান।বাঙালির মধ্যে বেশিরভাগই ইসলাম ধর্মাবলম্বী৷ তবুও বিশ্বব‍্যাপী বাঙালি মুসলমান ২০ কোটি হলেও তাদের বাঙালিসত্ত্বা নিয়ে  প্রশ্ন তুলেছে আসছে অল্প সংখ্যক হিন্দুত্ববাদীরা৷পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিকেও ভারতীয় বলে প্রমাণ দিতে হচ্ছে তাদের কাছে
যারা ইংরেজের দালালি ও আনুগত্য স্বীকার করেছিল৷এই হিন্দুত্ববাদীদের দোসর প্রশাসনও পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিকে বাংলাদেশী বলে চরম অত‍্যাচার ক‍রছে ৷কোনো বিচার ও তদন্ত ছাড়াই আক্রমন করা হচ্ছে৷অধিকাংশই  পুলিশের চোখে বাঙালির মাতৃভাষা বাংলা বলা যেন প্রায় দন্ডনীয় অপরাধ৷কিন্তু ইতিহাস বইতে পুরো বাংলাকে  "বাংলাদেশ" ( তখন বাংলাদেশের জন্ম হয়নি)বলে অনেক জায়গায় আলোচনা আছে তবুও " বাংলাদেশ" শব্দকে একটি ঘৃনার পাত্র ও শত্রু হিসেবে দাঁড় করাতে চাই " হিন্দু - হিন্দি - হিন্দুস্থান " বীজমন্ত্র৷ এই হিন্দুত্ববাদীরা আগে বাংলা ভূখণ্ডকে ভাগ করেছে এবার যতটুকু আমাদের যুক্ত বাঙালি সংস্কৃতি ও সাহিত্য ,মনন চর্চা আছে সেটাকেও তারা ধর্মীয় সূত্রে আড়াআড়ি ভাবে ভাগ করতে চাইছে৷আমাদের বাঙালি জাতিসত্ত্বার উপরে সর্বশেষ আঘাত আনতে চাইছে ,তাই এপারের হিন্দু বাঙালিকে  "মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি " হয়েছে তত্ত্বে খেপিয়ে তুলছে ,ভাবিয়ে তুলছে ৷ ফলে অনেক মননশীল  ,যুক্তিবাদী ,প্রগতিশীল হিন্দু বাঙালীর মনে " হিন্দু বাঙালি নিশ্চিহ্নতার " সংকট নিয়ে সংকীর্ণতা বাসা বাঁধছে ,ফলে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে  হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোটা ক্ষীনস্রোত৷আজ দিল্লি ,উত্তরপ্রদেশ ,গুজরাট ,রাজস্থান ,মহারাষ্ট্র ,হরিয়ানা এবং ওড়িশা  রাজ‍্যে গত কয়েকমাস ধরে " অবৈধ বাংলাদেশী " সন্দেহে বহু বাংলাভাষীকে আটক করা হচ্ছে ,জেলে বন্দি করা হচ্ছে ,যারা আসলে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা৷ এখনতো মহিলা ,বাচ্চারাও আক্রান্ত হচ্ছে৷সাম্প্রতিক হত্যাও করা হয়েছে৷ আজকে যে বাঙালি শ্রমিক ভাষা সন্ত্রাসে আক্রান্ত ,অত‍্যাচারিত তবুও কলকাতার ভদ্রভিত্তরা বাঙালিদের চোখে ধরা পড়ছে না ,বলছে উড়ো খবর ,তারা মিডিয়াতে বসে বাঙালি আক্রান্ত নয় নিজেদের বয়ান দাঁড় করাচ্ছে৷ মনে হয় তাদের এলিট চোখে পশ্চিমবঙ্গের শ্রমজীবি মানুষ বাঙালি নয় ৷না হলে বলতেন কোথায় বাঙালি আক্রান্ত হচ্ছে৷অবাঙালি হিন্দুত্ববাদীরা ও পুলিশ বাংলা ভাষায় কথা বললে শাসানি দিচ্ছে এবং বাংলাদেশী তকমা দিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তে " মানুষ " ( বাঙালি) কে আবর্জনার মত ছুড়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে৷এই বিদ্বেষমূলক নীতি নিয়ে সরব হয়েছেন মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনিও হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে  সরাসরি লড়াই না করে চুপ ,একেই বলে ব্রাম্মণ‍্যবাদী রাজনীতি৷যে হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি বাংলা দখল করতে চাইছে  তাদের শাসিত রাজ‍্যে  বাঙালিকে অস্পৃশ্য করে তুলেছে৷আজকে যখন  বাঙালি মুসলমানের উপর অত‍্যাচার শুরু হয়ে হিন্দু বাঙালির উপর অত‍্যাচারের ঢেউ আছড়ে পড়েছে তখন একটু ঘুম ভেঙে উঠতে দেখা যাচ্ছে আপামর বাঙালিদের৷প্রথমেই  বাঙালি মুসলমান অত‍্যাচার হলেও এখন আবার হিন্দু -মুসলিম বাদ বিচার না করে সমগ্ৰ পরিযায়ী বাঙালিদের  উপর অত‍্যাচার হচ্ছে৷বলা যায় হিন্দত্ববাদীদের হাতে আজ হিন্দু বাঙালিও আক্রান্ত৷পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি আজ ভাষা সন্ত্রাসে আক্রান্ত ৷ এখানে ভাষা সন্ত্রাসী বলতে অবাঙালি হিন্দুত্ববাদীরাই ও হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন৷ বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের উপর বিরূপ আচরণ শুরু করেছে বিজেপি শাসিত রাজ‍্য গুলোতে৷এই বিদ্বেষমূলক নীতি মূলত RSS মতাদর্শের লোকজন থেকে  হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা করে আসছে৷শুধু তাই নয় ,তাদের উপর শারিরীক নির্যাতনও চালানো হচ্ছে এবং পুলিশি অত‍্যাচারও চলছে৷বেশ কয়েকজনকে বাংলাদেশের বিতাড়ন ক‍রা হচ্ছে এবং তারা নিজের চেষ্টায় আবার ফিরে এসেছেও৷ কেউ আবার লাশ হয়ে ঘরে ফিরছে৷যে হিন্দুত্ববাদী দল বাংলা দখল করতে চাইছে  তাদের শাসিত রাজ‍্যে  বাঙালিকে অস্পৃশ্য করে তুলেছে৷এই হিন্দুত্ববাদী দল আজকে শুধু বাঙালিকে অত‍্যাচার করছে বলে নয় ,এরা আগে থেকেই দলিত ,মুসলিমকে দৈনন্দিন হত‍্যা ও অত‍্যাচার করে চলেছে এবং বাড়িতে বুলডোজার চালিয়ে নাগরিকদের ছাদহীন করেছে ,ধর্ষণ করেও ছাড় পেয়ে যাচ্ছে ,সন্ত্রাসী কাজ করেও ক্লীনচিট পেয়ে যাচ্ছে এবং দলিত ,মুসলিম সমাজ থেকে শিক্ষিত যুবক যুবতীদের রাষ্ট্র UAPA আইনের ধারা  লাগিয়ে জেলবন্দি করে কমিউনিটির মধ্যে ভয়ের পরিবেশ জিইয়ে রেখেছে ,এগুলো আমরা বাঙালিরা না দেখেও নিজের মত করে জীবন যাপন করে গেছি ,আজকে যখন মুসলমানের উপর অত‍্যাচার শুরু হয়ে হিন্দুর উপর অত‍্যাচারের ঢেউ আছড়ে পড়েছে তখন একটু ঘুম ভেঙে উঠতে দেখা যাচ্ছে আপামর বাঙালিদের
 ৷প্রথমেই  বাঙালি মুসলমান অত‍্যাচার হলেও এখন আর হিন্দু -মুসলিম বাদ বিচার না করে সমগ্ৰ পরিযায়ী বাঙালিদের  উপর অত‍্যাচার হচ্ছে৷
আজকে যে পুলিশ অত‍্যাচার করছে এই পুলিশের মধ্যে বেশিরভাগই যে আর এস এস এর সদস্য সেটা নিয়ে হৈচৈ হয় না ৷যখন  বলা হয়েছিল এবার থেকে সরকারি কর্মচারীরাও আর এস এস সদস্য হতে পারবে ,তখন আমরা চুপচাপ ছিলাম৷বাঙালি সংখ‍্যাগরিষ্ঠ সমাজের বেশিরভাগ অংশের মধ্যে এমন ভাবে মুসলিমবিদ্বেষ জাঁকিয়ে বসেছে যে বাঙালি বিদ্বেষকে সেই ভাবে উপলব্ধি করতে পারছে না৷একসময় যে রকম ইংরেজের আনুগত্য  স্বীকার করেছিল নবজাগরণের ভদ্রবিত্তরা তেমনি আজকে  হিন্দুত্ববাদীদল বিজেপির আনুগত্য করে চলেছে  আজকের কলকাতার ভদ্রবিত্তরা৷এরাই বাঙালির জাতির সঙ্ঘা ঠিক করে এবং এরাই না কি বাঙালি তথাকথিত সংস্কৃতির ধারক বাহক ৷আজকে প্রকৃত শোষিত জাতি বাঙালি আর অপরদিকে শোষক হচ্ছে বর্ণবাদী,হিন্দুত্ববাদীদল বিজেপি৷ আর এস এস শতবর্ষ পূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে বাঙালি জাতি এই শ্রেণী সংগ্ৰাম ও চেতনা জাগ্ৰত হয়নি৷বাঙালি জাতির RSS এর  প্রতি আনুগত্য নিয়ে পোস্টমর্টেম জরুরী ৷শুধু বাঙালি খেদাও নয় ,বাঙালির অর্থনীতিকে ভেঙে ফেলা হচ্ছে ধিরে ধিরে ৷ পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ বন্দর থেকে বাংলাদেশে পণ্য রফতানি বন্ধ রাখা হয়েছে অথচ গুজরাট থেকে বাংলাদেশে পণ্য রফতানি চালু আছে৷বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা বন্ধ রাখার ফলে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসা ,ব‍্যবসা পর্যটন শিল্প ক্ষতির মুখে পড়েছে৷বাঙালির উপর গণহত্যা হলে তখন হয়তো ঘুম ভাঙবে৷ বাঙালির উপর ঘটে যাওয়া"নেলী গণহত্যা" নিয়ে আজও কোন বিচার হয়নি৷এই "নেলী গণহত্যা' করেছিল হিন্দুত্ববাদী RSS৷
পশ্চিমবঙ্গে বাঙালিদের বিরুদ্ধে সঙ্ঘ পরিবার যে অভিযান চালাচ্ছে তা কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে দক্ষিণপন্থীদের পুরনো অভিযানের মতোন ৷ নয়ের  দশকজুড়ে অভিযোগ করা হয়েছিল কাশ্মীরি মুসলমানরা নাকি পাকিস্তানপন্থী৷ এতে কাশ্মীর উপত্যকা আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ৷ কিন্তু নেপাল ,চায়না বাসীদের ভারতের মধ্যে বসবাস নিয়ে এই রকম বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে?বাংলাদেশের সঙ্গে যতটুকু বাঙালির আত্মিক সম্পর্ক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ আছে তাকে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে ৷ উদ্দেশ্য ২০২৬ সালের বাংলার বিধানসভায় নির্বাচনের আগে বাংলায়,বহিরাগত,বাংলাদেশি ,রোহিঙ্গা ,অবৈধ অভিবাসী ,ঘুসপেটিয়া ( পড়ুন মুসলিম)
বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ ভোটের নাম সংশোধনের নামে জুড়ে দেওয়া  হচ্ছে" রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী " ভূত৷আতঙ্ক তৈরি করে সাম্প্রদায়িক বিভেদেকে উস্কে দেওয়া হচ্ছে৷ বাংলাদেশী ,রোহিঙ্গা শব্দগুলো হিন্দু মুসলিম বিভাজন তৈরি চেষ্টায় মুসলিমদের বোঝাতে ব‍্যবহার করছে বিজেপি৷এই বিভাজন নীতি আওড়ে চলেছেও শহর থেকে গ্ৰাম বাংলার সংখ‍্যাগরিষ্ঠ সমাজ বেশিরভাগ অংশ৷কারণ এদেশের সংখ‍্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের বড় একটি অংশ ভয়ানক মুসলিম বিরোধী৷বিজেপি চার দশক ধরে মুসলিম বিরোধী অভিযান চালাচ্ছে৷আজকে বাংলা ভাষা ,সংস্কৃতিকে ভাগ করে চলেছে  বিজেপি -আর এস এস হিন্দুত্ববাদীরা ৷আদ‍্যপান্ত মুসলিম বিরোধী দল বিজেপি তবুও  সংখ‍্যাগরিষ্ঠ বাঙালি সমাজ বিজেপিকে আশ্রয় দিয়ে হিন্দুত্ববাদী উপনিবেশ তৈরি করতে চাইছে বাংলা ৷ পশ্চিমবঙ্গে যে " হিন্দুত্ব 'বাদের জন্ম ,সেই বৃত্তকে উজ্জিবিত করে রাখতে চাইছে৷এই দৃষ্টিভঙ্গি শুধুমাত্র ভাষাভিত্তিক ঘৃণাই নয়, বরং একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক কৌশলের পেছনে রয়েছে ধর্ম ও ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের প্রচার, যেখানে হিন্দিভাষাকে রাষ্ট্রীয় মানদণ্ড বানিয়ে অন্য ভাষাগুলিকে হেয় করা ৷ভারতীয় রাষ্ট্রব্যবস্থার এক গভীর রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকটের প্রতিফলন দেখেও আমাদের মহামান্য সুপ্রিমকোর্ট নীরব৷আজকে ভারতের বিচার ব্যবস্থা কন্ট্রোল করছে RSS৷ ওদের মজদুর, শিক্ষক ,ডাক্তারদের নিয়ে সংগঠন সমাজের প্রতিটি স্তরে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিতে সফল হয়েছে৷ভারতীয় সংবিধান স্পষ্টভাবে এই ধরনের বৈষম্য নিষিদ্ধ করেছে। সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, আইনের চোখে সবাই সমান। ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদে ধর্ম, ভাষা, জাতি বা জন্মস্থান ইত্যাদির ভিত্তিতে বৈষম্য নিষিদ্ধ। ১৯(১)(ঘ) ধারায় যেকোনো নাগরিকের দেশজুড়ে স্বাধীনভাবে চলাচলের অধিকার স্বীকৃত। ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ জীবনের ও ব্যক্তিগত মর্যাদার অধিকার রক্ষা করে। এবং ৫১(এ) ধারায় ভাষাগত সম্প্রীতি রক্ষার মৌলিক কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং, বাঙালি পরিচয়কে ঘিরে যে অবিচার চলছে, তা কেবল মানবিক অন্যায় নয়, এটি ভারতের সংবিধানের লঙ্ঘন।বোঝা যাচ্ছে সংবিধানে যাই থাক ,মোদির ভারত আদতে হিন্দুরাষ্ট্র৷ যখন প্রকাশ‍্যে হিন্দুরাষ্ট্র  নিয়ে হুমকি দেওয়া হয় তখনও বাঙালি জাতি নীরবতা পালন করছিল৷ এই নীরবতার পালনের মাশুল গুনতে হচ্ছে৷শুভেন্দুর হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই থিওরিও হিন্দুত্ববাদীদের কাছে টিকছে না৷ধরা যাক,যদি অনুপ্রবেশকারীরা ভারতে আসে ,তাদের ঠেকানোর দায়িত্ব পুরোপুরি বি এস এফ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওপরের বর্তায়৷ আমাদের সমীন্তরক্ষায় এই দায়কে নিচ্ছে না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক৷ বিজেপি সংখ‍্যাগরিষ্ঠ সমাজের উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে  খুব সহজে সংখ‍্যলঘু সম্প্রদায়কে দানবের/অসুরে রূপান্তর করেছে৷বাঙালি মুসলমানদের যখন ছুড়ে ফেলা হচ্ছে কাঁটাতারের ওপারে তখন 
এলিট বাঙালি সাম্প্রদায়িকতা  আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে বলছে  এ তো আল্লাহর গজব৷এই শয়তান বাঙালিরা জানে যে
বাঙালি শিক্ষক, বাঙালি ডাক্তার, বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার কেউ আক্রান্ত হচ্ছে না। আক্রান্ত হচ্ছে কিছু বাঙালি শ্রমজীবী মানুষ।তাই শ্রমজীবী বাঙালির  মুখের ভাষা  বাংলা ভাষা, কোন একিডেমিক অধ‍্যিপকের বলার অধিকার নয় ,ওটা বাংলা ভাষা নয় ,ওটা বাঙালির সংস্কৃতি নয় ,এই সব বলে নিজেকে বাঙালি ভাষা ও সংস্কৃতির ধারক বাহক ভাবা৷জাতিগত ভাবে সমদর্শী হলেও ৷ কিন্তু বাঙালি চাষী ও শোষিত বাঙালি আর শোষণবাদী বাঙালি ডাক্তার ,ইঞ্জিনিয়ার ,ইত্যাদির জীবনযাত্রা এক নয় ,উভয়ের কালচারও কোথাও এক নয়৷
বেশীরভাগ হিন্দু বাঙালি ভাবছে তারা নিরাপদ!  মুসলিমেরা  চুলোয় যাক!  এই ভেবে বিজেপির সুরে গান গাইছে। অথচ আসামের রিপোর্ট দেখুন, সেখানে হিন্দুদের সংখ্যাই অনেক বেশি ডিটেনশন ক্যাম্পে।শয়তান বাঙালিদের  বিরুদ্ধে জেহাদ কোথায়?আজও যারা বাঙালির ঐক্যবদ্ধ নিয়ে বলছে তাঁদের প্রশ্ন থেকে যায়,যখন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন " আত্মদ্বীপ" বাঙালির ওবিসি সংরক্ষণ বাতিলের জন্য  হাইকোর্ট করে ৷পিছিয়ে পড়া বাঙালির উন্নতি জন্য সংরক্ষণের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে বাতিল করা হচ্ছে তখন নীরব  থেকেছে  এগিয়ে থাকা বাঙালি সমাজ৷গঙ্গা ভাঙনের ফলে বাঙালি ভূমিহীন হয়ে যাচ্ছে ৷বাংলায় বসবাসের জমির  পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে তা নিয়ে সবাই চুপ ৷ বাঙালি যখন একজন বাঙালিকে ঘর ভাড়া দেয় না তার ধর্মীয় পরিচয়ের জন‍্য এবং বাঙালির ভোটে উর্দু ভাষী ও হিন্দিভাষী নেতাদের জিতিয়ে মন্ত্রী করা হচ্ছে ,বাঙালি মুসলমানকে নেতৃত্বহীন করা হচ্ছে তখন বাঙালি উচ্চবরগীয় পরিচালিত রাজনৈতিক দলগুলোর বাঙালির জাতির সমন্বয় সাধন ও সমতা ,সমকক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে৷ বাঙালি ঐক্যবদ্ধ শুধু ভাষায় নয় ,রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রশ্ন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ৷ আমরা কি বাঙালি জাতির উন্নয়ন চাইছি ,তাহলে প্রত‍্যেক বাঙালি গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিনিধিত্ব কোথায়?বাঙালি বিশেষ করে সংখ‍্যালঘু মুসলমান বাঙালির ওপর রাষ্ট্রের সরাসরি আক্রমণ  ,সেই আক্রমণকারী শাসকের ধর্মীয় পরিচয় বড় হয়ে ওঠে না ,কিন্তু একটি গরীব বাঙালির ধর্ম পরিচয়ের জন্য অনেক বঞ্চিত হতে হয়৷বাঙালি মুসলমানদের অবস্থা গোদের উপর বিষফোঁড়া । একে বাঙালি , তার ওপর মুসলমান । প্যান্ট খু'লে চেক করেছে,  হিন্দু না মুসলমান ৷মহারাষ্ট্র সরকার সার্কুলার জারি করেছে, বাংলাদেশীদের যে কাজে নেবে ধরা পড়লে তাকেও গ্রেফতার করা হবে।বিহারে ট্রেন থেকে বের করে মারা হচ্ছে৷আসাম ও  ত্রিপুরায় বাঙালি গণহত্যার ব্লুপ্রিন্ট তৈরী।বাঙালি কে গৃহবন্দী করে আর্থিক অগ্ৰগতি আটকে দেওয়া হিন্দুত্ববাদীদের এজেন্ডা৷জনগণের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ চলছে রাষ্ট্রের সঙ্গে ,সেই রাষ্ট্রের শাসক হিন্দুত্ববাদী৷রাষ্ট্র বাদে হিন্দু যুবকের দল গিয়ে " বাঙালি খেদাও " করছে৷এদিকে জয় বাংলা বললে রেগে যাচ্ছে শুভেন্দু ,উল্টে জয় বাংলার স্লোগানের বিরুদ্ধে " জয় শ্রী রাম " বলা হচ্ছে ৷ এই জয় শ্রী রাম ধ্বনি দিয়ে দেশের মানুষকে কম হত্যা করা হয়নি৷আজকে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের জয় শ্রী রাম বলতে বাধ্য করা হচ্ছে ৷এত আন্দোলন করার পরও  মহারাষ্ট্রে বাঙালি শ্রমিক আবুবক্কার মন্ডল কে নৃশংসভাবে খুন হতে হয় তার ভাষিক পরিচয়ের জন্য!!ভাষার সঙ্গে মিশে থাকে সংস্কৃতি৷ ভাষার মৃত্যু মানে সংস্কৃতিরও অবলোপ৷ফলে বাঙালি জাতির ঐক্য আজ কঙ্কাল সার৷

ওয়াহেদ মির্জা
ওয়াহেদ মির্জা

কবি ও প্রাবন্ধিক