About Us | Contact Us |

নওশাদকে বিজেপি কি ট্রোজেন হর্স এর মতন ব্যবহার করছে ???

লিখেছেন : আনজুম মুনীর
নওশাদকে বিজেপি কি ট্রোজেন হর্স এর মতন ব্যবহার করছে  ???

একদিকে SIR এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন বিরোধিতা করছেন প্রতিবাদ করছেন আর অন্যদিকে জনসভায় বলছেন SIR নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনার বাপ দাদা জ্ঞাতিগোষ্ঠী তারা তো বাংলাদেশী নয় তাহলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, এটা নওশাদ সিদ্দিকীর স্টেটমেন্ট। তাহলে প্রশ্ন তো উঠেই যাচ্ছে যে কুড়িটা সংগঠন কয়েক লক্ষ মানুষকে নিয়ে রাস্তায় নামলেন কেন যদি ভয়ের কিছু না হয়ে থাকে? 

“বর্তমান সময়ে রাজ্যে যতগুলো অপকর্ম হচ্ছে, যারা করছেন তাদের মধ্যে সিংহভাগই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ।” এটিও নওশাদের স্টেটমেন্ট যেটা রিপাবলিক নিউজে গিয়ে বলেছেন। এটি হতে পারে পাবলিসিটি স্ট্যান্ড যেটা এতদিন দিলীপ ঘোষ বা আরো অন্যান্যরা করতেন মিডিয়া এটেনশন বা পাবলিকের অ্যাটেনশন পাওয়ার জন্য। এরকম স্টেটমেন্ট মোঃ সেলিম আব্দুল মান্নান দের অধীর চৌধুরীদের মুখে কোনদিনও শোনা যায়নি।

কোন শিক্ষিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা সমাজ সচেতন কোন মানুষ ন্যাশনাল টেলিভিশনে বসে এইরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন একটা স্টেটমেন্ট দিচ্ছে এটা সন্দেহজনক শুধু নয় গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত বহন করছে। এটা ঠিকই যে তৃণমূল দলে বেশ কিছু অপরাধ মামলায় অভিযুক্ত নেতা-মন্ত্রী রয়েছে এবং এই মুহূর্তে তৃণমূলের বুথ ভিত্তিক সংগঠন যেহেতু বেশি সুতরাং সেখানে সব ধরনের লোকজনের ওঠাবসা থাকবে এটা স্বাভাবিক। যারা সংগঠন করে তারা বোঝে এর সাথে কোন ধর্মীয় সংযোগ নেই। ৩৪ বছর সিপিএম ক্ষমতায় ছিল গুনে গুনে কয়েকশো তার বেশি ক্রিমিনালদের নাম বলা যাবে যারা মুসলমান এর মানে তো এটা নয় যে গোটা মুসলিম সমাজের সিংহভাগ ক্রিমিনাল অ্যাক্টিভিটির সঙ্গে ছিল। সিপিএম কংগ্রেস আজ শূন্য আসনে রয়েছে তারাও কোনদিন কোন অবস্থাতে এরকম স্টেটমেন্ট দেয়নি।

৩৭০ তিন তালাক NRC CAA বিলগুলো নিয়ে এসেছে বিজেপি সরকার পর পর এবং সম্প্রীতি আরও তিনটে বিল পাস হলো তার মধ্যে কোন নেতার ক্রিমিনাল রেকর্ড থাকলে ৩০ দিন জেলে বন্ধ থাকলে তার পদ চলে যাবে। সেই সঙ্গে SIR যেটা গত মাস থেকে বিহারে শুরু হয়েছে ৬৫ লক্ষ মানুষের নাম বাদ চলে গেছে। এগুলো তো রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র রাষ্ট্র এই ষড়যন্ত্র চক্রান্ত করছে নিজেদের গদি ধরে রাখার জন্য। 

বিহারে ৬৫ লক্ষ মানুষ যাদের নাম বাদ গেল তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ভোটাধিকার হারিয়ে ফেলল। এখন তাদের মৃত পূর্বপুরুষদের কবর খুঁড়ে কাগজ বের করতে হবে। কারণ এটা আইনে পরিণত হয়েছে। নওশাদ বোধহয়  রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সম্পর্কে কোন ধারণাই রাখেন না। অথবা উনি জানেন যে ওনাকে কেউ টাচ করবে না বা ওনার একটা রক্ষা কবজ রয়েছে।

উনি বাম আমলের কথা বললেন তখন ২৮  লক্ষ নাম বাদ গেছিল, তৃণমূল বিরোধী দলের আসনে ছিল তখন কোনোরকম হই হট্টগোল হাঙ্গামা হয়নি। ঠিক কথা কিন্তু কংগ্রেস আমলে প্রায় ৬০ বছরের কার্যকালে কখনই এই ধরনের ষড়যন্ত্র মূলক আইন করে মানুষকে নিষ্পেষণ করার মানুষকে বিপদে ফেলার কাজ করেনি।

রাজনৈতিক মতাদর্শগত ভাবে বা নীতিগত ভাবে ওনার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে তৃণমূলকে পছন্দ না হতেই পারে, কিন্তু রাহুল গান্ধীকে নিয়ে তার ভাবনা অবস্থান পরিষ্কার নয়। বর্তমানে রাহুল গান্ধী  সর্বভারতীয় স্তরে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যসভা লোকসভা সর্বত্র ভারতের কোনায় কোনায় SIR নিয়ে প্রতিবাদ করছেন। সম্প্রীতি রাহুল গান্ধী ভোট চুড়ি নিয়ে বিরাট একটা পর্দা ফাঁস করেছেন। গোটা ভারতের বিরোধী দল আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের নেতা-মন্ত্রীরা এক জোট এই ভোট চুরি নিয়ে। ইলেকশন কমিশন কেন্দ্র সরকারকে এক প্রকার গর্তে ঢুকিয়ে দিয়েছে। কারণ এই চুরিটা দিনের আলোর মতন পরিষ্কার হয়ে গেছে। 

ভোট চুড়ি নিয়ে যখন গোটা ভারত উত্তাল তখন নওশাদের কোন স্টেটমেন্ট নেই কেন এর জবাব উনিই দিতে পারবেন! উনি গ্রেপ্তার হলে কংগ্রেসের স্টেটমেন্ট প্রত্যাশা করছেন কিন্তু কংগ্রেসের সর্বভারতীয় কর্মসূচি নিয়ে তার কোন স্ট্যান্ড নেই এটা কেমন ধরনের দ্বিচারিতা? গত বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে কংগ্রেস সিপিএমের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে নওশাদের কেন? বিজেপির সঙ্গে সান্নিধ্য বেড়ে যাওয়াই কি আব্দুল মান্নান মোঃ সেলিমদের সঙ্গে দূরত্বের কারণ।

নওশাদ সিদ্দিকী কে বিজেপি সহ বিজেপির মদতপুষ্ঠ রিপাবলিক ভারত পুরোপুরি মাইলেজ দিচ্ছে, শুভেন্দু অধিকারী নওশাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠছে, রিপাবলিক টিভিতে নওশাদ প্রাইম টাইমে প্রায়ই দেখা যাচ্ছে। এই জায়গায় তো সন্দেহ দানা বাঁধতেই পারে মানুষের প্রশ্ন জাগতেই পারে, তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির যে সেটিং এর কথা বারবার উঠছে, সেই সেটিং কি উনিও বিজেপির সঙ্গে করছেন?? সরকার ইলেকশন কমিশনের ভোট চুরি নিয়ে যে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র হয়েছে সেই বিষয়ে তার নীরবতা এই প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে!!

আসাম বিধানসভা নির্বাচনের আগে ঠিক এই ভাবেই মুসলিম সংগঠনের একটি অংশ তারা বিজেপির পক্ষে দাঁড়িয়ে বিজেপিকে ভোট করতে বলে। আসামে বিজেপি ক্ষমতায় এসে সেখানকার সংখ্যালঘুদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। এভাবে বিজেপি এবং বিজেপির বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেতা-মন্ত্রীরা মাইলেজ দেওয়ার কাজ করছে তা থেকে স্পষ্ট যে নওশাদকে ব্যবহার করে সংখ্যালঘু ভোটকে ভাগ করতে চাইছে। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ভাঙ্গড় বিধানসভার বাইরে পশ্চিমবঙ্গের কোন বিধানসভা তেই ISF এর বুথ ভিত্তিক সংগঠন মজবুত নয়। তা সত্ত্বেও  বিজেপি তাকে প্রাধান্য দিচ্ছে তার মুখ থেকে মুসলিম সমাজের সমস্যা বা তৃণমূল বিরোধী বক্তব্য গুলোকে হাইলাইট করা হচ্ছে। 

গত এক মাসের বেশি সময় ধরে বিজেপি নেতা-মন্ত্রীদের এবং রিপাবলিক নিউজে  SIR নিয়ে প্রাইম টাইমে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে টানা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে এবং প্রোপাগান্ডা প্রাইম টাইম চালিয়ে যাচ্ছে। সেই জায়গায় ওরা নওশাদের SIR নিয়ে স্টেটমেন্ট কে হাইলাইট করা হচ্ছে। ভোট চুরির প্রতিবাদের দেশ যখন উত্তাল তখন নওশাদ এস আই আর এর বিরুদ্ধে রাস্তায় প্রতিবাদ করলে সেটাকে কার্যত মাইলেজ  দিচ্ছে বিজেপি এবং তাদের পোষা নিউজ চ্যানেল রিপাবলিক। কিন্তু এসআই আর নিয়ে বিজেপি এবং রিপাবলিক নিউজের স্ট্যান্ড উত্তর মেরু দক্ষিণ মেরু।

নওশাদ কি তেজস্বী যাদব যোগেন্দ্র যাদব বা কেন্দ্রের আরো যারা বড় আঞ্চলিক দলগুলো আছে তাদের নেতাদের থেকেও বড় কিছু! নিশ্চয়ই নয়। SIR এবং ভোট চুরি নিয়ে ভারতের প্রত্যেকটা আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল যখন একজোট তখন রাজ্যে একটা আসন নিয়ে নওশাদ সিদ্দিকীর রাজনৈতিক কর্মসূচি বা কর্মকাণ্ড যা কিছু তা প্রশ্ন তুলে দেয়ার মতন কাজ করছে।

আনজুম মুনীর
আনজুম মুনীর

সাংবাদিক, নতুন গতি