About Us | Contact Us |

প্রবাসী শ্রমিকদের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন

প্রবাসী শ্রমিকদের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন


  নির্বাচন কমিশনের নতুন নিয়মে  প্রবাসী শ্রমিকদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নানা মহল থেকে, প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য পোস্টাল ব্যালটের  দাবি উঠছে।  কারণ অনেকেই কাজে  ছুটি নিয়ে ভোট দিতে আসতে পারেন না। কিন্তু নির্বাচন কমিশন হাঁটছে উলটোপথে। নির্বাচন কমিশনের ভাবনা, প্রবাসী শ্রমিকরা কাজের সূত্রে যেখানে থাকেন, সেখানের ভোটার তালিকাতে তাঁদের নাম তোলা হবে। 
     নির্মাণ শ্রমিকসহ অনেক শ্রমিকই  নির্দিষ্ট এক জায়গায় কাজ করেন না।  আজ এখানে, কাল অন্য কোনও খানে - পেটের জ্বালায় ভেসে বেড়ান। সংগঠিত ক্ষেত্রে বা নির্দিষ্ট মজুরি/বেতনে কাজ করা বেশিরভাগ প্রবাসীদের কথা অবশ্য আলাদা। কিন্তু অসংগঠিত ক্ষেত্রে অস্থায়ীভাবে কাজ করা শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। তাঁদের বাসস্থান অনেক সময়ই কোনমতে বানানো ঝুপড়ি। যা বুলডোজার দিয়ে যে কোনও মূহুর্তে ভেঙে দেওয়া হয়। 
   অনেকে মরশুমি প্রবাসী। বছরের কিছু মাস অন্য রাজ্যে, বাকি সময়ে নিজের বাড়িতে থেকে কাজ করেন। এই রাজ্যের অনেক কৃষিজীবী কয়েক মাসের জন্য ক্ষেতমজুরি বা অন্য কাজে ভিন রাজ্যে যান। অনেকে আবার বিদেশেও কাজ করতে যান। এঁদের নির্দিষ্ট কাজের জায়গা না থাকায় তার ভিত্তিতে ভোটার তালিকায় নাম তোলার সুযোগ নেই। একমাত্র নিজেদের গ্রাম বা শহরের বাড়িই তাঁদের স্থায়ী ঠিকানা। নতুন নিয়ম হলে, এইসব প্রবাসী শ্রমিকদের কী হবে তার ভাবনা নির্বাচন কমিশনের আছে বলে মনে হয় না। অবশ্য অনেকের অভিযোগ, বিশাল সংখ্যক শ্রমিকের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য এই ছল করছে নির্বাচন কমিশন।  
     ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়া মানে একজনের নাগরিক হিসেবে অস্তিত্ব নিয়েই টানাটানি। যেমন হচ্ছে বিহারের প্রবাসী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে। ভোটার তালিকায় বিশেষ পরিমার্জনের সময়ে অনুপস্থিত থাকা প্রবাসী শ্রমিকদের নাম বাদ যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।   
     বাংলাভাষী প্রবাসী শ্রমিকরা এখন  ঘোর বিপদে রয়েছেন। বাংলা ভাষায় কথা বললেই, বাংলাদেশী বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তিনি যদি মুসলমান হন, তাহলে বিপদ আরও বেশি। দেশজোড়া এন আর সি - সি এ এ বিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই বাংলাভাষী প্রবাসী শ্রমিকরা হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে এই আক্রমণ বেশি। ওড়িশায় গত বছর বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর সেই রাজ্যেও আক্রমণ শুরু হয়েছে। হিন্দুত্ববাদী, বাঙালি বিদ্বেষী নানা সংগঠনই শুধু নয়, রাজ্য সরকারগুলিও এই সংবিধান বিরোধী কাজ করে চলেছে।  
    পহেলগামের জঙ্গি হামলার সঙ্গে জড়িতদের খোঁজ এখনও মেলে নি। কিন্তু তারপর বাংলাভাষী প্রবাসী শ্রমিকদের ওপর আক্রমণ বেড়েছে। দেশের নানা প্রান্তে বিশেষত বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে তাঁদের আটক করা হচ্ছে, জেলে অকথ্য অত্যাচারের অভিযোগ উঠছে। অনেককে বাংলাদেশি বলে জোর করে সেই দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা বললেও মুক্তি নেই। স্রেফ সন্দেহের বশে সরকার তাঁদের ওপর অত্যাচার করছে। আধার কার্ড সহ বিভিন্ন নথি দেখালেও মুক্তি মিলছে না। যে ভাষার গান আমাদের জাতীয় সঙ্গীত, সেই ভাষাতে অনেক রাজ্যে কথা বললেই বিপদ আসতে পারে। দেশপ্রেমের নামে নাগরিকদের প্রতি এমন বিদ্বেষ সত্যিই বিরল। দেশের টুকরে টুকরে গ্যাঙ আসলে কারা তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। 
    একজন প্রবাসী শ্রমিক এই দেশের কোন রাজ্যের বাসিন্দা তা, খুঁজে পাওয়া কঠিন নয়। রাজ্য সরকারগুলির পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকলে, প্রবাসী শ্রমিকদের কাজের জায়গার নথি যাচাই করলেই হয়। অতিমারির পর নানা মহল থেকে একটি রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের নাম, কাজের জায়গা, ধরন  ইত্যাদি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য ভাণ্ডার করার দাবি উঠেছিল। উল্টোদিকে সেই রাজ্যে কারা কোন রাজ্য থেকে কী কাজ করতে আসছেন তার তথ্য ভাণ্ডারও  গড়ার দরকার। রাজ্য বা সারা দেশের শ্রমিকদের নিয়ে কোনও তথ্যভাণ্ডারই যদি না থাকে, তবে তাঁদের কল্যাণের পরিকল্পনা কিভাবে হবে? 
    সব রাজ্য সরকারই সেই রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকের সংখ্যা কম, আর নিজের রাজ্যে কাজ করতে আসা শ্রমিকদের সংখ্যা বেশি করে দেখায়। কোনও পূর্ণাঙ্গ তথ্য ভাণ্ডার নেই। থাকলে এভাবে সন্দেহভাজন বলে প্রবাসী শ্রমিকদের ওপর অত্যাচার করা যেত না। সেই তথ্য যাচাই করেই সব প্রমাণ করা যেত।        
    ১৯৭৯ সালে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য আইন হয়। তাঁদের নাম নথিভুক্ত করে, কোথায় কোন কাজে নিযুক্ত করা হচ্ছে, কাজের সময়সীমা, মজুরি, ভাতা সহ নানা তথ্য ঠিকেদারদের জানাতে হবে। ঠিকেদার ঠিক সময়ে মজুরি না দিলে মালিকের দায় থাকবে। কিন্তু এই সবই রয়ে গিয়েছিল খাতায় কলমে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নাম গোত্রহীনভাবে প্রবাসী শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হয়। এমনকি সরকারি কাজে নিযুক্ত ঠিকে শ্রমিকরাও বঞ্চিত, অসুরক্ষিত থাকেন। মালিক, সরকার, কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি কেউই এসব নিয়ে  বিশেষ মাথা ঘামায় নি। শ্রম কোডের কল্যাণে বিভিন্ন রাজ্যে অবশ্য এখন এই আইন উঠেও গেছে। 
   করোনা অতিমারির সময়ে প্রথম, তাঁদের নিয়ে দেশজুড়ে হইচই শুরু হয়েছিল। 
অপরিকল্পিত লক ডাউনে তাঁদের দূরবস্থা, সরকারের আচরণ আমাদের বিবেককে  নাড়া দিয়েছিল। মালিক, ঠিকেদার, সরকার কেউ তাঁদের দায়িত্ব নেয় নি। যাঁদের শ্রমের বিনিময়ে সচল রয়েছে দেশের অর্থনীতি তাঁদের মানুষের মর্যাদা কেউ দেয় নি। ঘরে ফিরতে মাইলের পর মাইল তাঁরা হেটেছিলেন। অনেকে মারা যান। মহারাষ্ট্রে  ১৬ জন প্রবাসী শ্রমিক ক্লান্ত হয়ে রেললাইনে ঘুমিয়ে পড়লে পণ্যবাহী ট্রেন তাঁদের ওপর দিয়ে চলে গিয়েছিল। তাঁদের রক্তাক্ত মৃতদেহ আর রক্তমাখা রুটির দৃশ্যে শিউড়ে উঠেছিল সারা বিশ্ব। উত্তরপ্রদেশে গাদাগাদি করে লরিতে ফিরতে গিয়ে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। সব মিলিয়ে শতাধিক প্রবাসী শ্রমিক বাড়ি ফিরতে গিয়ে মারা গিয়েছিলেন। রাজ্যে রাজ্যে পুলিশি হেনস্থা, কোথাও তাঁদের ওপর কীটনাশক স্প্রে করা বুঝিয়ে দিয়েছিল, রাষ্ট্র শ্রমিকদের কোন দৃষ্টিতে গণ্য করে। 
   বাড়ি ফিরেও তাঁদের হেনস্থার শিকার হতে হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তো প্রথমে তাঁদের বাড়ি ফেরা আটকাতে  আন্ত:রাজ্য সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল। রাতারাতি কাজের জায়গায়, নিজেদের বাসস্থানে তাঁরা খলনায়কে পরিণত হয়েছিলেন। যেন তাঁরাই ভাইরাসের সংক্রমক। তাঁরা মরুক, কিন্তু কোথাও ঠাঁই দেওয়া যাবে না। 
   চারিদিকে হইচই শুরু হওয়ায় অবশেষে  সরকার নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছিল। কেন্দ্র, বিভিন্ন রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে শ্রমিক দরদী প্রচারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়। একশো দিনের কাজে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ সরকার আশ্বস্ত করেছিল, তাঁদের আর অন্য রাজ্যে যেতে হবে না। এখানেই কাজ পাবেন। রেল বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু চূড়ান্ত অব্যবস্থায় ট্রেনে ফিরতে গিয়েও অনেকে প্রাণ হারিয়েছিলেন। বিহারের মুজফফরপুর স্টেশনে মারা যাওয়া মহিলার নিথর দেহের পাশে প্রাণ থাকা তাঁর শিশু সন্তানের দৃশ্য দেখেও আমরা শিউড়ে উঠেছিলাম। 
     করোনা অতিমারির পর সব সরকারই সেইসব প্রতিশ্রুতি বেমালুম ভুলে গেছে। মধ্যবিত্ত নাগরিকদের বিবেকও আমার ঘুমিয়ে পড়েছে। প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি বঞ্চনা অব্যাহত রয়েছে।  দূর্ঘটনাই হোক বা অশান্তিতে  - ক্ষতিগ্রস্ত হন, প্রাণ হারান প্রবাসী শ্রমিকরা। ২০২৩ সালে মিজোরামে রেলসেতু নির্মাণ করতে গিয়ে ২৩ জন প্রবাসী শ্রমিক নিহত হন। সেই বছরেই উত্তরাখণ্ডে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের চারধাম প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে ৪১ জন শ্রমিক সতেরো দিন পাহাড়ি সুড়ঙ্গে আটকে পড়েছিলেন। অবশেষে একদল খনি শ্রমিক মৃত্যুমুখে পড়া সেই শ্রমিকদের উদ্ধার করেন। দুটিই ছিল সরকারি প্রকল্পের কাজ। কাজের বরাত পাওয়া কোম্পানিগুলি শ্রমিকদের নিরাপত্তার যথাযথ ব্যবস্থা না নিলেও, কোনও শাস্তি পায় নি। এই বছরেই তেলেঙ্গানার সিগাচি ইণ্ড্রাস্টিজের কারখানায় বিস্ফোরণে ৪২ জন শ্রমিক মারা যান। যাঁদের বেশিরভাগ প্রবাসী শ্রমিক। 
     ২০১৭ সালে রাজস্থানে উগ্র হিন্দুত্ববাদীর হাতে খুন হন আফরাজুল খান। মালদার কালিয়াচক থেকে রাজস্থানে কাজ করতে যাওয়া আফরাজুলকে হত্যার বীভৎস দৃশ্য ভিডিও করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। গত বছর গো মাংস নিয়ে যাচ্ছে অভিযোগ এনে হরিয়ানায় খুন করা হয় ২৩ বছরের যুবক সাবির মল্লিককে। তিনি দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বাসন্তীর বাসিন্দা। পরে প্রমাণিত হয় তাঁর কাছে গো মাংস ছিল না। ২০২৩ সালে জলাভিষেক যাত্রাকে কেন্দ্র করে হরিয়ানায় শুরু হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। এরপর প্রবাসী শ্রমিকদের বস্তি ভেঙে দেওয়া হয়। যাঁদের মধ্যে অনেকে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। 
      একদিকে ধর্ম, ভাষা, রাজ্যগত বিদ্বেষ, অপরদিকে কাজের ক্ষেত্রে বঞ্চনা - দ্বিবিধ আক্রমণে  প্রবাসী শ্রমিকদের অস্তিত্বই সঙ্কটে। হিন্দু-হিন্দি-হিন্দুস্থানের উগ্র রাজনীতির কারবারিরা হিন্দিভাষীদেরও যে রেহাই দেবে না, তা বিহারে  নির্বাচন কমিশনের আচরণে স্পষ্ট। তাঁদেরও নাগরিকত্ব নিয়ে আজ সঙ্কট তৈরি করা হচ্ছে। মহারাষ্ট্রে মারাঠা অস্মিতার পুরনো হাতিয়ার আবার ব্যবহার করতে শুরু করেছে শিবসেনা। বিহার ও উত্তরপ্রদেশ থেকে যাওয়া শ্রমিকরাও যার নিশানা।  
   বেকার সমস্যা, আর্থিক সঙ্কট যত বাড়বে, তত এই বিদ্বেষের রাজনীতি পুষ্ট হবে। সঙ্কটের জন্য অপরকে দায়ী করতে হবে। সেই অপর হতে পারেন, অন্য রাজ্য, দেশ, ভাষা, ধর্ম, বর্ণের লোক। আমেরিকায় বেকার সমস্যা, শ্রমিকদের আর্থিক সঙ্কটের ফলে সৃষ্ট ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে ভোটে জিতেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সঙ্কটের আসল কারণ লুকিয়ে তিনি বিদ্বেষের রাজনীতিতে সফল হয়েছেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও অভিবাসন নীতিকে কেন্দ্র করে উগ্র দক্ষিণপন্থীরা রাজনৈতিক তৎপরতা বাড়াচ্ছে। পুঁজিবাদকে সঙ্কট থেকে বাঁচাতে, মানুষের ক্ষোভকে অন্য পথে পরিচালিত করতে বিশ্বজুড়ে উগ্র দক্ষিণপন্থা, বিদ্বেষের রাজনীতিকে হাতিয়ার করছে। আমেরিকা থেকে আক্ষরিক অর্থেই বেড়ি পরিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে ভারতীয় শ্রমিকদের। একইভাবে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বন্দি করা হচ্ছে বাংলাভাষী প্রবাসী শ্রমিকদের। শ্রমিকরা কোথাও আজ নিরাপদ নন। 
    তবুও নিজেদের ঘর বাড়ি ছেড়ে পেটের দায়ে মানুষকে অন্য রাজ্য বা দেশে যেতে হয়। কৃষি সঙ্কট যত বাড়ছে, তত প্রবাসী শ্রমিক বাড়ছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার যতই দাবি করুক, রুজির জন্য রাজ্যবাসীর বহির্গমন কমে নি। এই প্রবাসী শ্রমিকদের যদি বিদ্বেষের মুখে ফেলে দেওয়া যায়, নাগরিকত্ব নিয়েই প্রশ্ন তোলা যায় তাহলে এদের মজুরি, কাজের নিশ্চয়তা, নিরাপত্তা, সামাজিক সুরক্ষা নিয়ে দাবি উঠবে না। অস্তিত্বের সঙ্কটে অন্যান্য অধিকারের দাবি গৌণ হয়ে যাবে। ফলে কম মজুরিতে, আরও কম সুবিধা দিয়ে কাজ করানো যাবে। শ্রমের বাজার আরো সস্তা হয়ে পুঁজির সহায়ক হবে। সরকার সেটাই চায়। বহুক্ষেত্রে মালিক বা ঠিকেদার তাঁদের কাজ করিয়ে নিয়ে মজুরি না দিয়ে বাংলাদেশী বলে দাগিয়ে দিচ্ছে। এই কৌশলকে একবার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারলে, তখন কেবল কম মজুরির নয় বেগার শ্রমবাহিনিও  তৈরি করা যাবে। আপাতদৃষ্টিতে এই আশঙ্কাকে বাড়াবাড়ি মনে হলেও, এখনই যদি প্রতিরোধ না গড়া যায় তাহলে সেই সময় আগত। 
   শ্রমিকদের মধ্যে যত বিদ্বেষ-বিভাজন সৃষ্টি করা যায়, পুঁজি-শ্রমের দ্বন্দ্বে তাঁরা তত কোণঠাসা হন। তেলেঙ্গানার কারখানায় বিস্ফোরণে নিহত শ্রমিকদের ধর্ম, ভাষার ভিত্তিতে আলাদা করা যায় না। ওড়িশায় বাঙালি শ্রমিকরা আক্রান্ত হচ্ছেন। আবার তেলেঙ্গানায় সেই দূর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে বাংলা ও ওড়িশা দুই রাজ্যেরই  প্রবাসী শ্রমিক রয়েছেন। উত্তরাখণ্ডে পাহাড়ি সুড়ঙ্গে আটকে থাকা শ্রমিকরা নানা রাজ্য থেকে কাজে গিয়েছিলেন। তাঁদের উদ্ধারকর্তা খনি শ্রমিকরাও নানা ধর্মের মানুষ ছিলেন। শ্রমিকরাই শ্রমিকদের উদ্ধার করেছেন। দেশজুড়ে বিদ্বেষ ছড়ানো কোনও শাসক নয়। উদ্ধারকর্তা খনি শ্রমিকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ওয়াকিল হাসান। যাঁর বাড়ি তার কয়েক মাস পরেই দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি ভেঙে দিয়েছিল।
    আশার কথা, করোনা অতিমারির পর ট্রেড ইউনিয়নগুলি প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কিছুটা হলেও নড়েচড়ে বসেছে। তাঁদের দাবি ট্রেড ইউনিয়নগুলির কর্মসূচিতে স্থান করে নিয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়ায় এই বছর  একটি বাম কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের ডাকা মে দিবসের অনুষ্ঠানে ধর্মীয় বিভাজনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার শপথ নেন  পশ্চিমবঙ্গ থেকে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকরা।  শ্রমিক ঐক্য আজ আর কথার কথা নয়। শ্রমিকদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার পথ।

ছবি : লাবণী জঙ্গী

মৃন্ময় সেনগুপ্ত
মৃন্ময় সেনগুপ্ত

রাজনৈতিককর্মী