About Us | Contact Us |

অবিভক্ত মেদিনীপুরে RSS ও রাজনীতি

লিখেছেন : ওয়াহেদ মির্জা
অবিভক্ত মেদিনীপুরে RSS ও রাজনীতি

র এস এস তৈরি হয় ১৯২৫ সালে ৷ নাম করন হয় ১৯২৬ সালে ৷ RSS একটি ব্রাম্মণ‍্যবাদী সংগঠন৷ এটি উচ্চবর্ণেরা তৈরি করেছে৷ এখনো পরিচালনা করে উচ্চবর্ণেরা৷ আর এস এস এর আকর গ্ৰন্থ হল মনুস্মৃতি৷ আরএসএস প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল বিজয়া দশমীর তিথিতে।নাগপুর শহরের একজন ডাক্তার কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এখন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত৷আর এস এসের জন্ম বৃত্তান্ত অনুসন্ধান করলে দেখা যায় যে ,আম্বেদকরের  নেতৃত্বে দলিত আন্দোলনের বিরোধিতার লক্ষ‍্যেই এই সংগঠনের জন্ম৷তখন  ব্রাম্মণ‍্যবাদী তথাকথিত উচ্চবর্ণের হিন্দুদের মনে এই ভাবনা তৈরি হয় যে ব্রাম্মণ‍্যবাদের শ্রেষ্ঠত্ব রক্ষা করতে হলে মুসলিম ও দলিতদের বিরুদ্ধে নিজস্ব সংগঠন তৈরি করতে হবে৷ এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে তৈরি হয় আর এস এস ৷ যার সঙ্গে যুক্ত হয়  মনুবাদ ও মনুবাদী দর্শন৷আমরা  জানি সকলে যে -মনুবাদের বর্ণাশ্রম ব‍্যবস্থাই শোষণের মূল উৎস৷ বর্ণ ও জাত ব‍্যবস্থার জন্ম দিয়েছে মনুবাদ৷স্বাধীনতার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে হিন্দু মহাসভা বা জনসংঘ বা বিজেপি কখনই খুব শক্তি অর্জন করতে না পারলেও ২০১১-র পর থেকে বিজেপির শক্তি ক্রমবর্ধমান৷ শক্তিবৃদ্ধির ক্ষেত্রে RSS-এর  শাখা সংগঠনগুলি সিভিল সোসাইটি বা জনসমাজে ,প্রান্তীয় ও নিন্মবরগের মধ্যে ,কীভাবে  তাদের শাখা প্রশাখা বিস্তার ঘটাচ্ছে ,ইতিহাস ও পুরাণের বিকৃতির ওপর দাঁড়িয়ে ,তার রূপরেখা এই প্রবন্ধে নির্মাণের চেষ্টা করছি৷RSS এর কলকাতায় প্রথম শাখা গঠিত হয় ১৯২৯ সাল-এ৷১৯৩০-এর দশকে ধীরে ধীরে বিভিন্ন রাজ্যে বিস্তার লাভ করতে শুরু করে।১৯৩৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতার টাউন হলে সাভারকরের জন্য এক জনসংহতি অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল৷
     ১৯৩৯ সাল -এর ২২শে মার্চ সদাশিব গোলওয়ালকর ও ভিথল রাও পাটকি-নেতৃত্বে কলকাতায় আর এস এস -এর প্রথম শাখাটির সূচনা হয় মানিকতলার তেলকল মাঠে৷ RSS Headquarter এখন বাংলাও৷ বাংলার কেশব ভবন থেকেই উত্তর-পূর্ব ভারতের 7 রাজ্যের ( ত্রিপুরা, সিকিম, অসম, বাংলা, বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডে )সঙ্ঘের সমস্ত কাজকর্ম কলকাতার দফতর থেকেই হয়ে থাকে৷দেওরস কলকাতায় এসে শ‍্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলেন৷ তিনি ১৯৩৯-এ হিন্দু মহাসভায় যোগ দিয়েছিলেন৷১৯৪০-এ শ‍্যামাপ্রসাদ শাখার কাজ পরিদর্শন করেন৷ সেই থেকেই তার সঙ্গে আর এস এস -এর সম্পর্ক তৈরি হয় ৷তিনি ১৯৫১ তিনি আর এস এস -এর রাজনৈতিক শাখা ভারতীয় জনসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন৷১৯৫২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জনসংঘ ৮৫ টি কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়ে ৯ টি কেন্দ্র জিতেছিল৷ এখানে একটু বলে রাখি বাংলার মাটিতে হিন্দু জাতীয়তাবাদ,পৌত্তলিক ভারতমাতার ধারণা  ,হিন্দুত্ববাদ ,হিন্দু রাষ্ট্রের ধারণা ,হিন্দু মেলা(১৮৬৭) ,ব্রাম্মণ‍্যবাদ সবই  প্রথম গড়ে ওঠে৷চন্দ্রনাথ বসুর বই " হিন্দুত্ব " প্রকাশিত হয়১৮৯২ সালে৷ বঙ্কিমচন্দ্রের  মুসলিম বিদ্বেষ উপন্যাস " আনন্দমঠ " প্রকাশিত হয় ১৮৮২ সালে ৷বঙ্কিমচন্দ্র প্রথম হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন৷বাংলার হিন্দুত্ববাদী উর্বর মাটিতে আর এস এস চাষাবাদ করতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি৷
     পশ্চিমবঙ্গে আর এস এস -এর কাজ ও বিস্তারকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়৷ প্রথম পর্ব ১৯৩৯ থেকে১৯৫৩,দ্বিতীয় পর্ব ১৯৫৩ থেকে ২০০৮ ও ২০০৯ এর পর্ব হল তৃতীয় পর্ব৷আর এস এস এর সামাজিক কাজগুলি ১৯৬৪ থেকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নামে ,১৯৭০-এর দশক থেকে বিদ‍্যাভারতী স্কুলগুলির মাধ্যমে ,১৯৮০-র দশক থেকে বনবাসী কল‍্যাণ আশ্রমের সূত্রে,১৯৮৯ থেকে একল অভিযানের হাত ধরে চালাত৷১৯৯০-এর দশকের মধ্যে এই সংগঠন অসংখ্য স্কুল, দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও মতাদর্শ প্রচারের উদ্দেশ্যে ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে।
     এদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের দিকে আসা যাক৷ভারতীয় ‘জনসংঘ’। শুভ সেই দিনটি ছিল ২১শে অক্টোবর, ১৯৫১। এই দলের আদর্শ ছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ। সেদিনের প্রধান সহযোগীরা হলেন বলরাজ মাধক, দীনদয়াল উপাধ্যায়, লালা হংসরাজ গুপ্ত, লালা বলরাজ, শ্রী ধরমবীর, পন্ডিত মৌলিক চন্দ্র শর্মা, সুন্দর সিং ভান্ডারী, অটল বিহারী বাজপেয়ি এবং চৌধুরী শ্রীচন্দ্র প্রমুখ।১৯৫১ সালে তৈরি হওয়া সেই ভারতীয় জনসংঘ ১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থার পর একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিশে গঠন করলো ‘জনতা পার্টি’ । ১৯৮০ সালে ‘জনতা পার্টি’র অবলুপ্তি ঘটিয়ে  জনসংঘের প্রাক্তন সদস্যরা গঠন করেন ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি।দলটি প্রথমের দিকে তেমন সফল হতে পারেনি। ১৯৮৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি মাত্র দুটি আসনে জয় লাভ করেছিল। একটি অন্ধ্রপ্রদেশের হানামকোন্ডা থেকে সি জঙ্গরেড্ডি এবং অপরটি গুজরাটের মেহেসানা থেকে এ কে প্যাটেল। জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি গঠিত হওয়ার মাত্র ষোলো বছরের মধ্যে, ১৯৯৬ সালে ভারতীয় সংসদে বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পূর্ণ মেয়াদের জন্য ভারতীয় জনতা পার্টির প্রধানমন্ত্রী হলেন অটল বিহারী বাজপেয়ি। ১৯৫১ সালে তৈরি হওয়া সেই ‘অখিল ভারতীয় জনসংঘ’ ১৯৫১-৫২ সালে দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।  শতাংশের বিচারে ৩% ভোট নিয়ে প্রথম থেকেই জাতীয় দলের মর্যাদা পাওয়া ‘জনসংঘ’ তিনটি লোকসভা আসন জেতে। দক্ষিন কলকাতা আসনে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সেই সঙ্গে বাংলা থেকে  দুর্গাচরণ ব্যানার্জি এবং রাজস্থান থেকে নির্বাচিত হন উমা শঙ্কর ত্রিবেদী। লোকসভায় বিরোধী দলনেতা নির্বাচিত হন ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী। স্বাধীন ভারতের প্রথমবার সেই নির্বাচনে ‘অখিল ভারতীয় জনসংঘ’ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় জিতেছিল মোট ন’টি আসন। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে সারাদেশে রাজস্থান বিধানসভা থেকেই আট’টি আসন ছিল জনসংঘের। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ১৯৫২র সেই নির্বাচনে কিষান মজদুর প্রজা পার্টি ১৫ টি, হিন্দু মহাসভা ৪টি, ফরওয়ার্ড ব্লক ১৩ টি, কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া ২৮ টি এবং কংগ্রেস একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পেয়েছিল ১৫০ টি আসন। স্বাধীন দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির নবগঠিত অখিল ভারতীয় জনসংঘের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ন’টি আসনের মধ্যে আট’টি আসনই ছিল অখন্ড মেদিনীপুরের।অখিল ভারতীয় জনসংঘের সেদিনের যুদ্ধ জয়ের সৈনিকরা ছিলেন ১. বিনপুর থেকে নৃপেন্দ্র গোপাল মিত্র, ২. ঝাড়গ্রাম থেকে মদনমোহন খান, ৩. নারায়ণগড় থেকে কৃষ্ণচন্দ্র শতপতি, ৪. পিংলা থেকে পুলিনবিহারী মাইতি, ৫. দাঁতন থেকে যোগেন্দ্র কুমার চৌধুরী, ৬. পটাশপুর থেকে জনার্দন সাউ, ৭. মোহনপুর থেকে বসন্তকুমার পানিগ্রাহী এবং ৮. ভগবানপুর থেকে রামেশ্বর পন্ডা। অখন্ড মেদিনীপুরের বাইরে কেবল কুলপি থেকে ৯. রামকৃষ্ণ কুমার জয়যুক্ত হয়েছিলেন। ১৯৫৩ সালে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির মৃত্যুর পরের পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ নির্বাচনগুলোতে জনসংঘ  সেইভাবে কোন দাগ কাটতে পারেনি। কেবল ১৯৬৭ সালে সাধারণ নির্বাচনে গোসাবা কেন্দ্র থেকে ভারতীয় জনসংঘের প্রার্থী হিসেবে জি এন মন্ডল জয় যুক্ত হয়েছিলেন। ১৯৭২ এর সাধারণ নির্বাচনে জনসংঘের কোন প্রার্থী পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ছিল না।এরপর এলো ১৯৭৭ এর নির্বাচন। জনসংঘ ভেঙ্গে সদ্য তৈরি হয়েছে ‘জনতা দল’। লড়াইয়ের মাঠে নামলেন মেদিনীপুরের জাতীয়তাবাদী ও শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির উত্তরসুরি নেতৃত্বরা। গোটা পশ্চিমবঙ্গে সেবার জনতা দলের আসন সংখ্যা দাঁড়ালো ২৯। মোট ২৯৪ আসনের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায়  সিপিআই ছাড়া বামফ্রন্ট পেল ২৩১টি আসন। জাতীয় কংগ্রেসকে পেছনে ফেলে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায়  সেই প্রথম, দ্বিতীয় বৃহৎ দলের মর্যাদা অর্জন করল ‘জনতা দল’। বিরোধী দলনেতা হলেন প্রফুল্ল সেন। ১৯৭৭ এর সেই নির্বাচনে গোটা মেদিনীপুর জেলা জুড়ে অভূতপূর্ব ফলাফল করলো শ্যামাপ্রসাদের আদর্শে ও আবেগে তৈরি জনতা দল। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মোট ১৬ টি বিধানসভা আসনের তমলুক (বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়) ও ময়না (পুলক বেরা) বামফ্রন্ট জিতলেও ১৪টি আসনেই জয়যুক্ত হয় শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির প্রতিষ্ঠাতা ‘জনসংঘ’র উত্তরসূরী ‘জনতা দল’। বর্তমান ভৌগোলিক মানচিত্রে পূর্ব মেদিনীপুরে জনতা দলের দখলে যাওয়া ১৪টি আসন হল – পাঁশকুড়া পূর্ব (স্বদেশ মাঝি), মহিষাদল (শাশ্বতী বাগ), সুতাহাটা (শিবনাথ দাস), নন্দীগ্রাম (প্রবীর জানা), নরঘাট (বঙ্কিম বিহারী মাঝি), ভগবানপুর (হরিপদ জানা), খেজুরি (সুনির্মল পাইক), কাঁথি  উত্তর (রাসবিহারী পাল), কাঁথি দক্ষিণ (সত্যব্রত মাইতি), রামনগর (বলাইলাল দাস মহাপাত্র), এগরা (প্রবোধ চন্দ্র সিনহা), মুগবেড়িয়া  (কিরণময়ী নন্দ) এবং পটাশপুর (জন্মেনজয় ওঝা)। সদ্য সমাপ্ত অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফলে পূর্ব মেদিনীপুরের জনগন ১৬ টি আসনের মধ্যে ১৫ টি আসনই ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) কে উপহার দিয়েছে। এর পরে ঝাড়গ্ৰমে ২০১১ বিধানসভায় বিজয়ী হোন বিজেপি প্রার্থী ( বিজয় মাহাতো),২০১৬ বিধান বিজয়ী হোন (অজয় কুমার সেন)৷পশ্চিম মেদিনীপুরে ২০১৬ বিধানসভায় খড়গপুর সদর  বিজয়ী হোন (দিলীপ ঘোষ)৷২০২১ বিধান সভায় খড়গপুর সদর-এ বিজয়ী হোন (হৃনময় চট্টোপাধ্যায় )এবং ঘাটালে (শীতল কপাট)৷২০১৯ শে মেদিনীপুর লোকসভা  বিজ‍য়ী হোন( দিলীপ ঘোষ) ৷পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় দুটি লোকসভা ২০২৪  তমলুক(অভিজিৎ গাঙ্গুলি) এবং কাঁথি (সৌমেন্দু অধিকারী) জয়ী হোন৷এরপর পূর্ব মেদিনীপুর ২০২১বিধানসভায়  ময়নাতে জয়ী হোন( অশোক দিন্দা),হলদিয়াতে (তাপসী মন্ডল), নন্দীগ্রামে (শুভেন্দু অধিকারী ),কাঁথি উত্তরে( সুমিতা সিনহা ),ভগবানপুরে (রবীন্দ্রনাথ মাইতি) , খেজুরিতে  (সান্তনু প্রামানিক), কাঁথি দক্ষিণে( অনুপ কুমার দাস) 
     ১৯৭৭ থেকে ২০২৪, ‘ফিরে ফিরে আসা ইতিহাস’ আবারও হিন্দুত্ববাদ পুনরুথ্থানের নজির সৃষ্টি করলো। জয় হল হিন্দুত্ববাদের, পূর্ব মেদিনীপুরের মাটিতে আবার হিন্দুত্বের ধ্বজা উত্তোলিত হল সগর্বে।পশ্চিমবঙ্গে ২০২১ সালের ২৭ মার্চ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত আট দফায় অনুষ্ঠিত হয়।২০২১ সালের ২ মে পশ্চিমবঙ্গের সপ্তদশ বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে পরাজিত হলেও (তিনি অবশ্য কারচুপির অভিযোগ তুলে এই ফলাফলকে কলকাতা হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করেন ,অবশেষে তিনি পরাজিত হোন) তাঁর দল সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস ২১৩টি (পরে আরও ২টি, মোট ২১৫টি) আসনে জয়লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং ভারতীয় জনতা পার্টি ৭৭টি আসন জয় করে বিধানসভায় প্রধান বিরোধী দলের স্বীকৃতি লাভ করে। সংযুক্ত মোর্চার বাম দলগুলি এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এই নির্বাচনে একটি আসনেও জয়লাভ করতে পারেনি, তবে এই জোটের অপর দল ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট একটি আসন জয় করে। এরপর ২০২১ সালের ৫ মে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয় বারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
     ভোট গণনা কেন্দ্রে বিজেপির এজেন্ট হয়ে ছিলেন তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের শাখা সংগঠন ‘সহকার ভারতী’ শাখার মাধ্যমে।সরাসরি ভোট প্রক্রিয়ার মধ্যে না থাকলেও এই ব্যাপারে বিজেপির ভরসা সঙ্ঘের এই শাখা সংগঠনটি, যারা মূলত কো-অপারেটিভ সংক্রান্ত নানা বিষয় পরিচালনা করে থাকে।গণনার দিনের জন্য প্রতিটি লোকসভা থেকে ১৮০ জন বিজেপি কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।সঙ্ঘের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কার্যবাহক তুষার দাসের জবাব, ‘‘সংগঠনের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা সব দিক দেখেই প্রশিক্ষক বেছেছেন। যাঁরা উপযুক্ত তাঁদেরই নিয়োগ করা হয়েছে।’’আরএসএসের তাম্রলিপ্ত বিভাগের সংঘ চালক গৌরহরি সামন্ত ৷(আনন্দ বাজার পত্রিকা ৩০ মে ২০২৪)

     ভারতীয় মজদুর সংঘ বা বিএমএস (BMS) রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ বা আরএসএস-এর একটি শাখা সংগঠন।(১৯৪৫ -এ দত্তপন্থ বাপুরাও ঠিংরি  কলকাতায় আসেন৷ তিনি ১৯৫৫ সালে শ্রমিক সংগঠন বিএম এস  গড়ে তোলেন৷)হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে তাদেরই বিজেপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে সামনের সারিতে দেখা যায়। তবে হলদিয়ায় ভারতীয় জনতা মজদুর সেল বা বিজেএমসি (BJMC) রয়েছে, যারা বিজেপির ভাবাদর্শে বিশ্বাসী এবং তাদের একাধিক কর্মসূচিতে দেখা যায় হলদিয়ার বিধায়ক তাপসী মণ্ডলকে। এই বিএমএস ও বিজেএমসি-এর আকচাআকচি বহু দিনের।সম্প্রতি তমলুকের বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় হলদিয়ায় বিএমএস-র এক অনুষ্ঠানে এসে বলেছিলেন, ‘সব কিছুর দেখভাল করবে ভারতীয় মজদুর সংগঠন, বিএমএস।বিএমএসের জেলা সম্পাদক চন্দন প্রামাণিক।(এই সময় ,০১/০৩/২৫)
     পূর্ব মেদিনীপুরের ভূমিপুত্র শুভেন্দু অধিকারী   ২০২১ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও, তিনি ২০২১ সাল থেকে নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক এবং ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কাঁথি দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন।তিনি এর আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবহণ মন্ত্রী হিসেবে ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এবং ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সেচ ও জলসম্পদ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।১৯ ডিসেম্বর ২০২০ সালে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দেন ৷১৭ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে তিনি সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেন। বিজেপিতে যোগদানের পর শুভেন্দুর রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে হিন্দুত্ববাদকে ঘিরে৷ এরফলে পুজোপাঠ ,খোল বাজিয়ে কীর্তনগান ,কথায় কথায় কৃষ্ণনাম ,সঙ্গে মুসলিম বিদ্বেষ রাজনীতি এবং নিজের বিধানসভা কেন্দ্র নন্দীগ্ৰামে রামমন্দিরের শিলান‍্যাস করেছেন৷জানুয়ারি  মাসে ২০১৯ সালে কাঁথির রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়  বিজেপির সর্বভারতীয়  সভাপতি অমিত শাহ-এর জনসভা ঘিরে রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি।অমিত শাহের সভা মিটতেই রণক্ষেত্রের চেহারা নিল কাঁথির বিভিন্ন এলাকা
     দিনভর দোকান পাঠ বন্ধ করে দেন ,জনসভায় আগত বিজেপি কর্মীবৃন্ধদের মারপিট করা হয়৷ তখন তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী ছিলেন শুভেন্দু অধিকারীর।২০১৮ সালে জুলাই মাসে সোমবার মেদিনীপুর কলেজিয়েট মাঠে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আয়োজিত জনসভায় রাজ্যের শাসক দলের মধ্যে এই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। শুভেন্দুর প্রচারে কাঁথিতে প্রধানমন্ত্রীর সভা, শিশির অধিকারীকে আমন্ত্রণ মোদির ‘দূত’লকেটেরশনিবার 'শান্তিকুঞ্জ'র অতিথি হয়ে মধ্যাহ্নভোজও করেন বিজেপি সাংসদ।মোদির ‘দূত’ হয়ে শিশির অধিকারীকে ২৪ মার্চ ২০২১সালে  তারিখ প্রধানমন্ত্রীর সভায় থাকার আমন্ত্রণ জানিয়ে এলেন বিজেপি সাংসদ লকেট। শুভেন্দু অধিকারী এবং তাঁর ছোট ভাই সৌম্যেন্দু আগেই বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। গত ২১ মার্চ যোগ দেন শিশির অধিকারী। বাকি থেকে যান একা দিব্যেন্দু।পরে তিনিও বিজেপিতে যোগদান করেন৷
     অবিভক্ত মেদিনীপুরে  কীভাবে সঙ্ঘ পরিবার হিন্দুত্বের ঢেউ তৈরি করেছে বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনগুলির মাধ্যমে ,যেমন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল এবং হিন্দু জাগরণ মঞ্চ, ২০১৬ সালের শেষের দিক থেকে কাঁথি তথা পুরো মেদিনীপুরে তাদের কার্যক্রম বাড়িয়েছে৷
রাম নবমী উদযাপনের প্রস্তুতির জন্য ২০১৭ সালের মার্চের শেষের দিকে হিন্দুত্ববাদী কার্যকলাপগুলি শীর্ষে পৌঁছেছিল – এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ছক এবং বাইক র‍্যালি রাস্তা এবং গলিতে ভ্রমণ করা – শহরের বিভিন্ন অংশে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে একটি উম্মাদনা ও ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা ৷ 
     উত্তর কুমার প্রধান, একজন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, যিনি ২০১১, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই) টিকিটে কাঁথি দক্ষিণ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ২০১৭সালে কাঁথিতে বিজেপির উত্থানের জন্য স্থানীয় সিপিআই(এম) নেতা ও কর্মীদের দোষারোপ করতে কোনো দ্বিধা করেন নি। তার পরে TMC-এর পঞ্চায়েত প্রধান (প্রধান) পবিত্র কর, একজন শুভেন্দু-অনুগত, হিন্দুদের জন্য একটি সংগঠন সনাতন সেনার ব্যানারে - বেশিরভাগ COVID-১৯ লকডাউনের সময় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ - সামাজিক কাজে অংশ নিতে শুরু করেছিলেন।৫ আগস্ট, পবিত্র কর, সনাতন সেনার ব্যানারে, উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উদযাপনের জন্য বয়ালে রামের একটি পূজারও আয়োজন করেছিলেন। শুভেন্দুর পথ অনুসরণ করে পবিত্র কর শেষে বিজেপিতে যোগ দেন।নন্দীগ্রাম এলাকায় হিন্দু জাগরণ মঞ্চ ৫ আগস্ট, ২০২০-এ নন্দীগ্রামের বেশ কয়েকটি স্থানে অস্থায়ী প্যান্ডেলগুলিতে রামের পূজার আয়োজন করেছিল। যেখানে পূজার আয়োজন করা হয়েছিল তার মধ্যে ছিল টেঙ্গুয়া মোড় এবং নন্দীগ্রাম বাজার। ২০ শে ডিসেম্বর,২০২০-এ, শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগদানের একদিন পরে, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ ১৩ডিসেম্বর, ২০০১-এর সংসদ আক্রমণের স্মরণে রাষ্ট্র সুরক্ষা দিবস পালনের জন্য নন্দীগ্রামের টেঙ্গুয়া এলাকায় একটি রাস্তার কর্নার সভার আয়োজন করে। ৩১শে ডিসেম্বর, ২০২০-এ, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ নন্দীগ্রাম থানায় একটি বিক্ষোভ করেছে যাতে ২৯শে ডিসেম্বর, ২০২০-এ বজরংবালীর পূজা উদযাপনের একটি সমাবেশে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় যেখানে বিজেপিতে যোগদানের পর নন্দীগ্রামে তার প্রথম সফরের সময় অধিকারী উপস্থিত ছিলেন। হিন্দু জাগরণ মঞ্চ, তারপরে বিজেপি "বজরংবলীর ভক্তদের উপর জিহাদি আক্রমণ" এর বিরুদ্ধে একটি উচ্চ-ভোল্টেজ প্রচার চালায়। হিন্দু জাগরণ মঞ্চ২১ শে মার্চ সন্তোষ ভিলায় নন্দীগ্রামে তার সমস্ত সংগঠকদের একটি সভা পরিচালনা করে যাতে নির্বাচনের সামনের দিনগুলিতে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণকে আরও তীব্র করা যায়।এই হিন্দুত্বের মেরুকরণে কাঁথি ও নন্দীগ্রামও এর ব্যতিক্রম ছিল না। ২০২০ সালের মার্চ-এপ্রিল থেকে এই হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির কার্যক্রম পুরো জেলা জুড়ে গতি পেয়েছে। জেলার গেরুয়া শিবিরের এক নেতার মতে, যিনি পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক, বিজেপি এবং সংঘ পরিবার সংগঠনগুলি শুভেন্দু অধিকারীকে অন্তর্ভুক্ত করার সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি মূল্যায়ন করেছিল এবং এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল যে বাম সমর্থকদের একটি অংশ যারা বিজেপির পতাকা তলে জড়ো হয়েছিল তারা বাম শিবিরে ফিরতে পারে শুভেন্দুকে তাদের বস হতে দেখে। “আমাদের মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে যে যারা বাম শিবির থেকে আমাদের সাথে যোগ দিয়েছে তারা মূলত অধিকারী পরিবারের দখলকে অস্থিতিশীল করতে চাইছিল। অধিকারীকে দেখে তারা বিজেপি যাতে না ছাড়ে তা নিশ্চিত করার জন্য, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে হিন্দু একত্রীকরণকে আরও জোরদার করা দরকার, এবং সমর্থকদের যে কেউ 'জয় শ্রী রাম' জনপ্রিয় করার জন্য কাজ করতে সম্মত হয়েছে তাকে হিন্দু হিসাবে ভোট দেওয়ার জন্য ডাকা হবে, " বলেছিলেন গেরুয়া শিবিরের একজন সংগঠক যিনি আরএসএস এবং বিজেপি নেতা। হিন্দুত্ব সমর্থকদের মধ্যে জনপ্রিয় স্লোগানগুলির মধ্যে একটি ছিল "লক্ষ্য যখন রাষ্ট্র জয়, প্রার্থী নিয়ে বিবাদ নয়", যার অর্থ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করতে হলে প্রার্থীদের নিয়ে কোনও ঝগড়া করা উচিত নয়। নভেম্বরের শেষের দিকে, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ তাদের ব্লক-স্তরের কমিটির সভা করতে শুরু করে। নন্দকুমার, মহিষাদল এবং সুতাহাটা এলাকায়, হিন্দু জাগরণ মঞ্চের ইতিমধ্যেই ব্লক-স্তরের কমিটি ছিল, এবং নভেম্বর-ডিসেম্বর ২০২০ থেকে, তারা পঞ্চায়েত-স্তরের কমিটি গঠন শুরু করে। শহীদ মাতঙ্গিনী কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ব্লকে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের কমিটি জানুয়ারিতে এবং কোলাঘাটে মার্চ মাসে গঠিত হয়েছিল। নন্দকুমারের কিছু এলাকায় হিন্দু জাগরণ মঞ্চের গ্রাম-পর্যায়ের কমিটিও রয়েছে। ১২ জানুয়ারী, ২০২১-এ, স্বামী বিবেকানন্দের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের জন্য জেলার বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল,১৯ শতকের হিন্দু সন্ন্যাসীর বারবার পুনরাবৃত্তি করা উদ্ধৃতিটি তুলে ধরে: "গর্ব সাথে বোলো আমি হিন্দু," যার হিন্দি সংস্করণ, "গরভ সে কাহো হাম হিন্দু হ্যায়” (গর্বের সাথে বলুন, আমি একজন হিন্দু) যা গত কয়েক দশক ধরে উত্তর ও পশ্চিম ভারতে জনপ্রিয়।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারী থেকে হিন্দু জাগরণ মঞ্চ যে প্রোগ্রামগুলি চালিয়েছে তা নিম্নে তুলে ধরা হলো : 

1. ২ ফেব্রুয়ারি খেজুরিতে হিন্দু সম্মেলন এবং ভারত মাতার পূজা। 
2. 4 ফেব্রুয়ারি ‘জিহাদি হানাদার’ কর্তৃক সরস্বতী পূজার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার বিরুদ্ধে কাঁথি শহরে আন্দোলন। 
3. ২০১৯ সালে পুলওয়ামা সন্ত্রাসী হামলার স্মরণে ১৪ ফেব্রুয়ারি নন্দকুমার এলাকায় বাইক সমাবেশ 4. দিল্লিতে নিহত হিন্দুত্ববাদী কর্মী রিংকু শর্মার হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে আন্দোলন১৩-২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জেলার বিভিন্ন ব্লক ও শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। 
5. ২৬ফেব্রুয়ারি পটাশপুরে হিন্দু সম্মেলন; 
6. ২৮ ফেব্রুয়ারি এগ্রায় হিন্দু সম্মেলন পাঁশকুড়া এলাকায় বাইক র‌্যালি ‘অখন্ড হিন্দু রাষ্ট্র’ দাবিতে এবং ‘বিশ্বব্যাপী হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের’ প্রতিবাদে ১ মার্চ। 
7. ২০মার্চ শহীদ মাতঙ্গিনী ব্লকে পদযাত্রা হলদিয়ায় বাইক র‌্যালি এবং যুব সম্মেলন 'অখন্ড হিন্দু রাষ্ট্র' দাবি করে এবং ২৩ মার্চ  'বিশ্বজুড়ে হিন্দুদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদ' 
8. ২৪ মার্চ সুতাহাটা ব্লকে বাইক র‌্যালি। 

উল্লেখ্য যে এই কার্যক্রমগুলি শুধুমাত্র হিন্দু জাগরণ মঞ্চ দ্বারা সংগঠিত হয়েছিল, যেখানে বজরং দল এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো সংগঠনগুলির নিজস্ব অনুষ্ঠান ছিল৷ তারা COVID-১৯ লকডাউন এবং ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের সময় সামাজিক কাজ এবং ত্রাণ কাজেও নিযুক্ত ছিল। হিন্দু জাগরণ মঞ্চ একজন অবসরপ্রাপ্ত সিআরপিএফ অফিসারকেও নিয়েছিল এবং অনেক এলাকায় মেয়েদের জন্য ক্যারাটে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আয়োজন করেছিল যেখানে অংশগ্রহণকারীদের 'লাভ জিহাদ' সম্পর্কেও অবহিত করা হয়েছিল। আরএসএস নিজেই গত তিন বছরে জেলায় 'খন্ড' নামে ব্লক-স্তরের কমিটি গঠন করেছে। হলদিয়ার শিল্প শহর ব্রজলালচক এলাকায় হিন্দু জাগরণ মঞ্চের অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে, তার একজন সমর্থক, সন্টু বেরা, দ্য ওয়্যারকে জানিয়েছেন যে বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার উদযাপনে ৬ ডিসেম্বর, ২০২০তে এই অফিসটি উদ্বোধন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠান চলাকালীন, আয়োজকরা গরীবদের মধ্যে কম্বলও বিতরণ করেন। রেকর্ডের জন্য, বিজেপির রাজ্য ইউনিটের সভাপতি দিলীপ ঘোষ পশ্চিমবঙ্গের প্রধান হিন্দু জাগরণ মঞ্চের নেতা ছিলেন ২০১৪ সালের শেষের দিকে আরএসএস দ্বারা বিজেপি রাজ্য ইউনিটে নিযুক্ত হওয়ার আগে। তারপর থেকে, রাজ্য জুড়ে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের কর্মীরা স্থানীয় বিজেপি নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে কাজ করতে এবং প্রায়শই বিজেপি কর্মী হিসাবে দ্বিগুণ হতে দেখা যায়। “যখন এই হিন্দু সংগঠনগুলি ২০১৭ থেকে সামাজিক বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা শুরু করেছিল, তখন তারা রাজনীতি নিয়ে কথা বলেনি। তারা শুধুমাত্র ইসলামোফোবিয়া ছড়ানোর চেষ্টা করেছে। মুসলমানদেরকে ‘জন্মজাত অপরাধী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং তাদের অভিযুক্ত করেছে, তাদের জন্মহার খুব বেশি। তারা বিজেপির ফসল কাটার জন্য জমি চাষ করছিল তা আমরা অনেক দেরিতে বুঝতে পারি৷
      এখন "শান্তিকুঞ্জ" পূর্ব মেদিনীপুরের নাগপুর৷পুরো পরিবার হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি দিকে ঝুঁকে পড়ে ৷ আমরা সবাই জানি কাঁথির মাটিতে পা পড়েছিল হিন্দুরাষ্ট্রের স্বপ্ন স্রষ্টা বঙ্কিমচন্দ্রের৷ তিনি ১৮৫৮-৫৯ সালে কাঁথিতে সাব-ডিভিশনাল অফিসার ছিলেন।কাঁথি অনেক আগে হিন্দুত্ববাদী চেতনায় পরিপূর্ণ৷ RSS এই সূত্র ধরে কাঁথিতে আঁতুরঘর বানিয়েছে৷হিন্দু জাতিয়তাবাদ জাগরণে গড়ে ওঠে ভারতমাতা মন্দির৷ কাঁথি সংস্কৃত মহাবিদ্যালয় ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়৷অনেক টোল শিক্ষা ব‍্যবস্থা গড়ে ওঠে৷সনতনী ব্রাম্মণ ট্রাস্ট তৈরি হয়৷ কাঁথির মাটি হিন্দুত্ববাদের শিকড় অনেক পুরনো৷ ১৯৯৫ সাল-এ কাঁথি হাইস্কুল মাঠে RSS প্রশিক্ষণ পরিচালনা করতেন শিক্ষক রবিন বাগ৷কাঁথিতে RSSএর ফেসবুক পেজ হল "CONTAI RSS"৷কাঁথি টাউন হলে সংস্কৃত সম্মলেন পালন করে ,শিবাজী উৎসব ,গোলওয়ালকরের জন্মদিন পালন হয় ,রাখী বন্দন উৎসব ,পুস্তক মেলা করে থাকে৷কাঁথি শহরে  ১২ই জানুয়ারি ২০২৫, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (RSS)মিছিল করে শহর পরিক্রমা করে ৷কাঁথি দুরমুঠ এ  RSS এর অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়৷কাঁথি সুজলপুরে ২০২৩ সালে মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে নামাজ চলাকালীন ভোলেবাবা মিছিল জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিয়ে বিশাল গন্ডগোল বাঁধায়৷মৈথনা বেলবনি তে RSS-এর অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও ক্লাস হয়৷RSS এর একল স্কুলগুলি পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ অঞ্চলে হিন্দুত্বের প্রসারে বিনামূল্যের কোচিং সেন্টার খুলে পড়ানো হয় ,যেটি ফ্রেন্ডস অফ ট্রাইবালস সোসাইটি বা FTS নামে একটি অলাভজনক সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হয়।FTS-এর একল বিদ্যালয় রাজ্যের ৪,৪৪০টি কোচিং সেন্টার আছে৷বর্তমানে আরও বেড়েছে ,পশ্চিমবঙ্গের ব্লকে  ব্লকে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেছিলেন৷স্থানীয়ভাবে, FTS-কে বনবন্ধু পরিষদ বলা হয়। FTS-কে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ দ্বারা সমর্থিত, এখানে ক্লাস শুরু হয় সরস্বতী বন্দনা দিয়ে, যা হিন্দু দেবী সরস্বতীর প্রতি একটি ধর্মীয় মন্ত্র। গায়ত্রী মন্ত্র - একটি বৈদিক স্তব -ও কোচিংয়ের অংশ । শিশুদের জন্য ভারত মাতার মূর্তির সামনে নমস্কার করা বাধ্যতামূলক ৷বিভিন্ন এনজিও মাধ্যমে RSS এই কাজগুলো করে থাকে৷অনেক নিরপেক্ষ সংগঠন নামে আছে কিন্তু ভিতরে ভিতরে RSS এর চিন্তা চেতনায় কাজ করে ৷যেমন শ্রী হরি সৎসঙ্গ সমিতি।এখানে হরি কথা, রাম কথা এবং ভাগবত কথা - হিন্দু দেবতা বিষ্ণু ও রামের গল্প এবং একটি হিন্দু ধর্মগ্রন্থ, ভগবদ গীতার অধিবেশন পরিবেশন করা হয়।
     সকলেরই লক্ষ্য ছোট বাচ্চাদের উপর: বনবাসী কল্যাণ আশ্রম, বা ভিকেএ, যা আদিবাসী এলাকায় কাজ করে আরএসএসের শাখা; রাষ্ট্রীয় সেবা ভারতী, বা আরএসবি, যা সংঘের সমাজসেবা শাখা; এবং বিদ্যা ভারতী অখিল ভারতীয় শিক্ষা সংস্থা, যা গেরুয়া সংগঠনের শিক্ষা শাখা। ভিকেএ শিশু শিক্ষা কেন্দ্র নামে বিনামূল্যে প্রাক-প্রাথমিক কোচিং সেন্টার পরিচালনা করে, যেখানে আরএসবি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে কোচিং সেন্টার পরিচালনা করে, যেগুলিকে যথাক্রমে সংস্কার কেন্দ্র এবং পাঠদান কেন্দ্র বলা হয়। বিদ্যা ভারতী, যার সারা দেশে ১৪,০০০ আনুষ্ঠানিক বেসরকারি স্কুল রয়েছে, তার আনুষ্ঠানিক স্কুলগুলির সাথে সংযুক্ত সংস্কার কেন্দ্র নামেও অনানুষ্ঠানিক কোচিং সেন্টার পরিচালনা করে। এই সংস্থাগুলি হয় সরাসরি অথবা SHSS-এর মতো অনুমোদিত এনজিও এবং সংগঠনগুলির একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কেন্দ্রগুলি পরিচালনা করে।১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে, একল অভিযানের মডেলের উপর ভিত্তি করে,  ১৯৯৯ সালে, ভিএইচপি এক শিক্ষক-শিক্ষিকা স্কুল খোলা শুরু করে। ২০১১ সালে আরএসবি এই লড়াইয়ে নামে এবং এক বছর পরে বিদ্যা ভারতী এতে যোগ দেয়।জাতীয়ভাবে, একল অভিযানের নেতৃত্বে রয়েছে একল অভিযান ট্রাস্ট নামে একটি ছাতা সংগঠন, যার সদর দপ্তর কলকাতায় অবস্থিত। এই ট্রাস্টের মধ্যে রয়েছে EVF, FTS, SHSS, AFI, GF, ES এবং ভারতের একল বিদ্যালয় ফাউন্ডেশন - যা EVF-এর একটি পুনরাবৃত্তি যা ২০০০ সালে নয়াদিল্লিতে আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত হয়েছিল। এই ট্রাস্টের মধ্যে রয়েছে ভারত লোক শিক্ষা পরিষদ, বা BLSP, যা ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং উত্তর ভারতের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে একটি একল সত্তা, FTS-এর অধীনে ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি মহিলা সংগঠন রাষ্ট্রীয় মহিলা সমিতি এবং গ্রাম-ভিত্তিক একটি স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান গ্রাম স্বরাজ মঞ্চ। FTS এবং BLSP সরাসরি একল স্কুল পরিচালনা করে এবং সেগুলি পরিচালনার জন্য তহবিল সংগ্রহ করে, অন্যদিকে EVFI বিদেশ থেকে সংগৃহীত তহবিল পরিচালনা করে।এই খানে বলে রাখি "ভারত টুডে" ৬ জুলাই ২০১৯ তারিখে জানিয়েছিল : গোটা দেশের হিসেব অনুসারে উত্তরপ্রদেশের পরে ২০১৯ এ পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি যুবক আর এস এস -এর  সদস্য পদের জন্য অনলাইন আবেদন করেছিল৷ ২০১৭ তে পশ্চিমবঙ্গে ৭৮০০ জন অনলাইন আবেদন করেছিল৷ কিন্তু ২০১৮ তে এই সংখ্যা ৯০০০ এ পৌঁছেছিল৷গণশক্তি পত্রিকায় অনিন্দ্য হাজরার ২১ এপ্রিল ২০২৩ তারিখের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় RSS এর শাখার সংখ্যা ছিল ৩৫০০৷মমতার শাসনে ১৫৭% বেড়েছে৷ RSS এর রাজ‍্য মুখপত্র  " স্বস্তিকা" মমতা ব‍্যানার্জির ভূয়সী প্রসংশা করে ছিল৷ তবে সিপিএম-এর আমলে ১৪০০ শাখা ছিল৷ সিপিএম এর আঁতুরঘর কেরালায় দেশের মধ্যে সবথেকে বেশি আর এস এস শাখা সংগঠন আছে একটি রিপোর্টে জানা যায়৷এই মুহূর্তে রাজ‍্যে আর এস এস পরিচালিত স্কুলের সংখ্যা ৩৩৬ টি ও পড়ুয়া সংখ্যা ৮৮ হাজার৷এই স্কুল গুলি রাজ‍্য বোর্ডের অনুমোদনিত৷ আজকে রাজ‍্য ৮০০০ স্কুল বন্ধের কারন কী বলে দিতেহবে? এই বিষয়টি দেখে বিদ‍্যা বিকাশ পরিষদ৷গোটা দেশে তারা বর্তমানে ৮৩,৫৭৮ টি একল বিদ‍্যালয় চালাচ্ছে৷ মোট ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা ২১,৯৭,৯৩১৷ পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে একল বিদ‍্যালয় সংখ্যা ৩৫১২ টি৷বিদ‍্যাভারতী স্কুল রয়েছে ২০০৩ সাল অব্দি ১৪০০০ এখানে ১৭ লক্ষ শিক্ষার্থী রয়েছে৷২০১৬।সালের রিপোর্ট অনুযায়ী শিশু মন্দির স্কুলের সংখ্যা পূর্ব মেদিনীপুরে ১৫ টি৷ পশ্চিম মেদিনীপুরে ৫৪ টি৷স্কুল গুলির নাম  আদর্শ বিদ‍্যামন্দির ,শিশু ভাটিকা ,সরস্বতী শিশু মন্দির ,সরস্বতী বিদ‍্যামন্দির ,সরস্বতী বিদ‍্যালয়,সারদা শিশুতীর্থ ইত্যাদি৷মধুসূদন চ‍্যাটার্জি তার উক্ত প্রতিবেদনে দেখিয়েছেন ,বর্তমানে সারা দেশে ৫০,০০০ আর এস এস পরিচালিত স্কুল রয়েছে৷ মোদি অনেক সৈনিক স্কুলও তুলে দিয়েছেন৷২০১৯ সালেও পশ্চিমবঙ্গে থেকে ২ লক্ষ সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছিল বিশ্বহিন্দু পরিষদ৷পশ্চিমবঙ্গে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ কাজ শুরু হয় ১৯৬৬-৬৭ সাল থেকে স‍্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পুত্র রমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সহযোগিতায়৷
     মেদিনীপুরেও একল বিদ্যালয়  সাধারণত আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে স্থাপন করা হয়েছে৷ গত কয়েক বছরে জেলার আদিবাসী প্রধান এলাকা এবং পুরনো জনপদগুলিতে শাখা" বেড়েছে সঙ্ঘের। বেড়েছে স্বয়ংসেবকের সংখ্যাও।পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রতি সঙ্ঘের যে আলাদা নজর রয়েছে, তা স্পষ্ট হয়েছিল  আরএসএসের দ্বিতীয় বর্ষ সঙ্ঘ শিক্ষাবর্গে (প্রশিক্ষণ শিবির) গত বছর(২০২২) মে মাসে কেশিয়াড়িতে এসেছিলেন মোহন ভাগবত।এখন পরিসংখ্যান বলছে, পশ্চিম মেদিনীপুরে বহরে বাড়ছে সঙ্ঘ। আরএসএসের শাখা সংগঠন ‘নিত্য’র শাখা বেড়েছে জেলায়। বেড়েছে প্রশিক্ষিত স্বয়ংসেবকের সংখ্যাও। তিন বছরে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে বলে খবর। বেড়েছে সঙ্ঘ থেকে প্রকাশিত পত্রপত্রিকার পাঠকের সংখ্যাও।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রাক্তন স্বয়ংসেবক (এখন বিজেপিতে সক্রিয়) বলেন, ‘‘সারা রাজ্যে ২৭টি শাখা সংগঠন কাজ করছে। মেদিনীপুরে আগে ছিল ১৩টি শাখা সংগঠন, এখন বেড়ে হয়েছে ১৭টি।’’ শাখা সংগঠনগুলি জেলার প্রতিটি মহকুমাতেই কাজ করছে।এক দিকে ঘাটাল, গড়বেতার মতো পুরনো জনপদ, অন্য দিকে আদিবাসী এলাকা, বিশেষ করে ধর্মান্তরিত অনগ্রসর সম্প্রদায়ের কাছেও সঙ্ঘের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হচ্ছে বলে দাবি। সূত্রের খবর, প্রতি বছর এখান থেকে ২০০-২৫০ জন স্বয়ংসেবক প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছেন রাজ্যের তিনটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। গ্রাম বিকাশ যোজনার কাজ দ্বিগুণ বেড়েছে। গত বছর কেশিয়াড়িতে সঙ্ঘ প্রধানের উপস্থিতিতে এই গ্রাম বিকাশ যোজনার কাজ নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হয়। 
     জঙ্গলমহলে, বিশেষ করে ঝাড়গ্রাম অঞ্চলে, "বনবাসী কল্যাণ আশ্রম" নামের একটি সংগঠন কাজ করে। এটি মূলত আদিবাসী সম্প্রদায়ের শিশুদের জন্য আবাসিক বিদ্যালয় (বনবাসী কল্যাণ আশ্রম) এবং অন্যান্য শিক্ষা ও উন্নয়নমূলক কাজ করে৷ ২০২৪ সালে বেলপাহাড়ীতে তৈরি হয় বনবাসী কল্যাণ আশ্রম পরিচালিত  "সাধু রামচাদ মুর্মু ছাত্রাবাস  । একল বিদ্যালয় এবং শিশু মন্দির (প্রাথমিক বিদ্যালয়) এর মতো আরও কিছু সংগঠনও এখানে কাজ করে, যা এই অঞ্চলের আদিবাসী সম্প্রদায়ের শিক্ষা ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সংগঠনগুলি আরএসএস-এর সাথেও যুক্ত. 
বনবাসী কল্যাণ আশ্রম ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ৷জঙ্গল মহলে হনুমান মূর্তি এবং মন্দিরের প্রাচুর্য দেখা গেল। কারন ২০১৪ সালের তুলনায় বাঁকুড়া, পুরুলিয়া (৪২.১%), বিষ্ণুপুর (৩২.১%) এবং ঝাড়গ্রামে (৩৪.৮%) বিজেপির ভোটের ভাগ ১৪.৪% বৃদ্ধি পেয়েছে। 
     জঙ্গলমহল অঞ্চলের প্রতিটি গ্রামে একটি করে হনুমান মন্দির থাকলেও, উজ্জ্বল কমলা রঙের পতাকা এবং তুলনামূলকভাবে ছোট হনুমান মূর্তিগুলি শীতলা এবং মনশা সম্প্রদায়ের পূর্ব-বিদ্যমান মন্দিরগুলিতে রাখা হয়েছে৷এর থেকে জানা যায় আরএসএসের উৎপত্তি এবং গতিপথ পশ্চিম মেদিনীপুরে কেমন।অবিভক্ত মেদিনীপুরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) দ্বারা পরিচালিত স্কুল সরস্বতী শিশু মন্দির অনেক শাখা আছে,  যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতায় এই স্কুলটির কথা উঠে এসেছিল । তিনি বলেন, “কেশিয়ারিতে (ব্লক) একটি আরএসএস স্কুল রয়েছে। আগে আরএসএস-এর কিছু ভালো মানুষ ছিল যারা ত্যাগ এবং নিষ্ঠার মূল্য দিতেন। কিন্তু আজ, তারা কেবল সুবিধা আদায়ের দিকে মনোনিবেশ করছে। এই কারণেই বিজেপি নোংরা খেলায় লিপ্ত হয়েছে।এর থেকে বোঝা যায় ”মমতা আরএসএসকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন"।(দ্য প্রিন্ট-১৭ মে, ২০২৪)
     মোহন ভাগবত কেশিয়ারিতে শুরু হওয়া  তিন সপ্তাহ ধরে চলা একটি আরএসএস প্রশিক্ষণ শিবিরে উপস্থিত থাকবেন।তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার পুলিশকে তাঁকে "মিষ্টি এবং ফল" দিয়ে স্বাগত জানাতে বলেছেন, পাশাপাশি সংগঠনের প্রধান মোহন ভাগবতের চার দিনের অবস্থানের সময় কোনও "দাঙ্গা" না হয় তা নিশ্চিত করতে বলেছেন।১৭ মে থেকে ২০ মে (2022 সালে )পর্যন্ত আরএসএস প্রধানের কেশিয়ারিতে থাকার উদ্দেশ্য কী? … “আপনি প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে মিষ্টি এবং ফল পাঠাতে পারেন। তাকে বুঝতে দিন যে আমরা আমাদের অতিথিদের সাথে কতটা আন্তরিক,” শ্রী ব্যানার্জি এখানে একটি পর্যালোচনা সভায় তার কর্মকর্তাদের বলেন।
     আবার পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনে মেদিনীপুর কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী জুন মালিয়ার সমর্থনে নির্বাচনী সভা করতে গিয়ে সংঘকে ভোগী বলে আক্রমণও করে বসলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 
    "সঙ্ঘ পরিবারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই গড়বেতার তিনটি ব্লকেই শুরু হয়ে গিয়েছে রামনবমী পালনের প্রস্তুতি। কোথাও হয়েছে দেওয়াল লেখা। কোথাও বৈঠক। বেশি সংখ্যক এলাকা ছুঁতে এ বার ছোট ছোট বাইক মিছিলের কথা ভেবেছে সঙ্ঘ।২০২৫ সালে ৬ ই এপ্রিল ছিল রামনবমী৷এই উদ‍্যেশ‍্যে এ বার সপ্তাহ তিনেক আগে থেকেই গড়বেতা, চন্দ্রকোনা রোড, গোয়ালতোড় এলাকার রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) ঘনিষ্ঠ বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দল ওই দিন পালনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে।হিন্দু জাগরণ মঞ্চের দক্ষিণবঙ্গের প্রচার প্রমুখ চন্দ্রকোনা রোডের পারিজাত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শ্রীরামনবমী পালনের প্রস্তুতিতে এখনও পর্যন্ত ১৮ টি বৈঠক হয়ে গিয়েছে। বাইক র‌্যালিতে যাঁরা শামিল হবেন তাঁদের নাম, ফোন নম্বর, বাইকের নম্বর জানাতে একটি কাগজ পাঠানো হবে। তার প্রস্তুতিও চলছে।’’
     বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নীলকমল পাল বলেন, ‘‘আমাদের শ্রীরামনবমী পালনের উদ্দেশ্য নিষ্ঠাভিত্তিক সনাতন ভিত্তিক কার্যক্রম করা। প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি পাড়ায় শ্রীরামের পুজো হোক, সৎসঙ্গ হোক, রামকথা হোক— এটাই আমাদের উদ্দেশ্য। তাই প্রতি এলাকায় ছোট করে হলেও র‌্যালির চেষ্টা থাকছে।’’
     গতবছর চন্দ্রকোনা রোডে রামনবমীর মিছিলে তৃণমূল নেতাদেরও হাঁটতে দেখা গিয়েছিল। গড়বেতার বিধায়ক উত্তরা সিংহও বাইক মিছিলে ছিলেন।রাম মন্দির নিয়ে প্রচার শুরু হবে একটু পরে। তবে ইতিমধ্যে ঘাটাল মহকুমা শুরু হয়েছে সংস্কৃত ভাষা শেখানোর চেষ্টা। সৌজন্যে ‘সংস্কৃত ভারতী’। এই ‘সংস্কৃত ভারতী’ নামক প্রতিষ্ঠানটি রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের বিচার পরিবারের সদস্য। এই মুহুর্তে ঘাটাল মহকুমায় তিন চার জায়গায় সাপ্তাহিক সংস্কৃত চর্চা চলছে। তার মধ্যে ঘাটাল নগর (ঘাটাল শহর) এবং দাসপুরের কেলেগাদা আর ধানখালে ওই চর্চা চলছে বলে খবর।চন্দ্রকোনাতে সংস্কৃতভারতীরই উদ্যোগে সংস্কৃত প্রচারে শিবির হয়েছে। তা ছাড়া দাসপুরেও সমানে চলছে ওই প্রচার।ছাড়াও চলছে গীতা শিক্ষণ কেন্দ্র। আরএসএসের মেদিনীপুর জেলা কাযবার্হ সমীরণ গোস্বামী বলেন, “ঘাটালে অনেক আগে থেকেই সংস্কৃতভারতীর তরফে সংস্কৃত ভাষার প্রচার ও প্রসার চলছে। ঘাটালেও দ্রুত রামমন্দির নিয়ে প্রচার শুরু হবে।’
     রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) বাংলার জঙ্গলমহল অঞ্চলে তার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এই ধারণা প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে সমস্ত উপজাতি সম্প্রদায় হিন্দু। এই পদ্ধতিটি আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী পরিচয় এবং দাবিগুলিকে ক্ষুণ্ন করে, যাদের ঐতিহাসিকভাবে  বনবাসী  (বনবাসী) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একইভাবে, স্বতন্ত্র ধর্মীয় রীতিনীতি থাকা সত্ত্বেও, কুর্মি সম্প্রদায়কেও আরএসএস হিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করছে।ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে আরএসএসের ধর্মীয় আখ্যানের প্রভাব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরএসএসের জাল ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে, যা আদিবাসী এবং কুর্মি সম্প্রদায়ের অনন্য সাংস্কৃতিক পরিচয়কে মূল্য দেয় এমনদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করছে।ঝাড়গ্রামের বিনপুরের আরএসএস প্রচারক বিনয় চক্রবর্তীকে যখন বেকারত্ব, স্বাস্থ্যসেবার অভাব এবং জঙ্গলমহলে স্কুলছুটের সংখ্যা বৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তখন তিনি এই উদ্বেগগুলিকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, "আমাদের লক্ষ্য সকলকে হিন্দুধর্মের আওতায় আনা। যদি আমরা তা না করি, তাহলে সমাজের অবনতি ঘটবে। মানুষের জীবিকা নির্বাহের বিষয়টি আমাদের চিন্তার বিষয় নয় - এটি সরকারের দায়িত্ব।"
     রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) পরিচালিত সরস্বতী শিশু মন্দিরের উপজাতি সম্প্রদায়ের স্কুল শিক্ষার্থীরা স্কুলের হোস্টেলে থাকে। কিন্তু আরএসএস স্কুল তাদের উপজাতি বনবাসী কল‍্যান আশ্রম
হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না; বরং তারা "বনবাসী হিন্দু" বলে।এক  শিক্ষক বললেন: "আদিবাসী বলতে আবার কী বোঝায়? এই জঙ্গল গ্রামে বসবাসকারী সকল মানুষ হিন্দু। তারা বহু প্রজন্ম ধরে বনাঞ্চলে বেড়ে উঠেছে। তাই, আমরা তাদের বনবাসী বলি।বিদ্যা ভারতী'। এই স্কুলগুলি আরএসএস দ্বারা পরিচালিত হয় তা শহর এবং রাজ্য জুড়ে সুপরিচিতবর্তমানে সারা দেশে ৫০,০০০ আরএসএস পরিচালিত স্কুল রয়েছে; বাংলায় প্রায় ৫০০টি স্কুল চলছে, যার বেশিরভাগই প্রাথমিক স্তরে।
     খড়গপুরে গোপালী আশ্রম ,১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ৷এখানে রয়েছে শিব মন্দির৷আশ্রমের ভিতরে আছে ছাত্রাবাস,সরস্বতী শিশু মন্দির, সারদা শিশুমন্দির ,পুস্তক বিক্রয়কেন্দ্র ,স্বদেশী ভান্ডার ,গোশালা৷ গোশালা নির্মাণে  গুজরাটি সমাজ অর্থদান করেছে৷১৯৪৯ সালে অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার খড়গপুরের গোপালী এলাকায় সদর দপ্তর স্থাপনের মাধ্যমে আরএসএস পূর্ব বাংলায় তাদের কার্যক্রম শুরু করে।১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে, আরএসএস জঙ্গলমহল অঞ্চলে কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে।২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর, জঙ্গলমহল এলাকার দৃশ্যপট বদলে যেতে শুরু করে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের বনাঞ্চলে আরএসএসের বিদ্যাবিকাশ পরিষদের ব্যবস্থাপনায় বেশ কয়েকটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।এই স্কুলগুলির মধ্যে কয়েকটির নাম ছিল সরস্বতী, মা সারদা, রামকৃষ্ণ, স্বামী অভয়ানন্দ এবং বোনবাসী কল্যাণ ছাত্রবাস।হিন্দুত্বের পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য, আরএসএস প্রায়শই   রামকৃষ্ণ সেবা নিকেতন, বিবেকানন্দ সেবা নিকেতন, বনবাসী কল্যাণ আশ্রম এবং অন্যান্য ব্যানারে গীতা  ও  রামায়ণের সন্ধ্যাকালীন পাঠের অধিবেশন আয়োজন করে। ঝাড়গ্রামের বিনপুর এবং লালগড়; পুরুলিয়ার বান্দোয়ান, বড়বাজার এবং বলরামপুর; এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা এবং শালবনির মতো জায়গায় এই অনুশীলনটি লক্ষ্য করা গেছে।
     মাওবাদী ধাত্রীভূমিতে কৌশল বদল করছে  আর এস এস ৷ ঝাড়গ্রাম জেলার জনজাতি ও কুড়মি প্রধান এলাকা লালগড়৷মুর্শিদাবাদ ও পহেলগাম জঙ্গি হামলার  ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হিন্দু রক্ষা বাহিনীর উদ‍্যোগে মশাল ,রাম ও হনুমানের ছবি চিত্রিত গেরুয়া পতাকা নিয়ে " হিন্দু শৌর্য পদযাত্রা "হয়েছে৷সাবেক ঝাড়গ্রাম মহকুমায় সঙ্ঘের কাজকর্ম শুরু হয়েছে ১৯৬৫ সালে৷ গত আড়াই দশকে সঙ্ঘের ১২ টি শাখা সংগঠন নানা কর্মসূচির মাধ্যমে হিন্দু জাতীয়তাবাদ প্রচার করে চলেছে৷ সঙ্ঘের মেদিনীপুর বিভাগের সম্পর্ক প্রমুখ উত্তম বেজ বলছেন" "যেখানে কাঁধ শক্ত ,সেখানে গেরুয়া পতাকা নিয়ে কর্মসূচি হচ্ছে৷ যেখানে কাঁধ অধিকতর শক্ত করা প্রয়োজন ,সেখানে জাতীয় পতাকা নিয়ে কর্মসূচি হবে৷"(আ:বা প-৩০/০৪/২৫)
     বিজেপির শিক্ষক সংগঠন জেলায় মাথা তুলছে। তার মধ্যে এ বার জেলার শিক্ষকদের নিজেদের সংগঠনের ছাতার তলায় আনতে উদ্যোগী হল সঙ্ঘ। এই যুক্তিতে পশ্চিম মেদিনীপুরের আনাচে-কানাচে প্রভাব বাড়াতে মরিয়া গেরুয়া-শিবির। এ ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)। সঙ্ঘ সূত্রে খবর, রবিবার ‘বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি’র জেলা কমিটি গঠিত হয়েছে। এই সমিতি আরএসএস-এরই শাখা সংগঠন। মেদিনীপুরে সঙ্ঘ নিবাসে বৈঠক করে সমিতির পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গঠিত হয়েছে। ছিলেন আরএসএস-এর জেলা কার্যবাহ স্বপন ফৌজদার, জেলা প্রচারক বরুণ ঘোষ, সঙ্ঘ চালক ঠাকুরদাস অধিকারী, বিভাগ সম্পর্ক প্রমুখ নিতাই দত্ত।শিক্ষক সংগঠনের এক কার্যকর্তার দাবি, ‘‘বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি একমাত্র সংগঠন যার সদস্য হলে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জুড়তে হয় না, ভোটের সময়ে কোনও দলের হয়ে প্রচারে যেতে হয় না!এর থেকে বোঝা শিক্ষকরা কত গোপন এজেন্ডা নিয়ে শিক্ষকতা করে চলেছেন৷(আ:বা প-৩০ জুলাই ২০১৯)
     মুর্শিদাবাদের সাম্প্রতিক অশান্তি ও কাশ্মীরে (পহেলগাঁও) জঙ্গি হানার পরিপ্রেক্ষিতে ঝাড়গ্রাম জেলার চারটি বিধানসভা এলাকায়(ঝাড়গ্রাম, বিনপুর ,গোপীবল্লভপুর ও নয়াগ্ৰাম) গড়া হল " জঙ্গলমহল হিন্দু সুরক্ষা বাহিনী"৷এই উদ‍্যোগ আর এস এস-এর ৷জঙ্গলমহল হিন্দু সুরক্ষা বাহিনীর জেলার অন‍্যতম আহ্বায়ক বাপ্পা বসাক ও অনুপম সিংহ বলছেন " সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে দলমত নির্বিশেষে হিন্দুদের একত্রিত করতে এমন উদ‍্যোগ৷ প্রথম পর্যায়ে বাহিনীর উদ‍্যোগে হিন্দু শৌর্য পদযাত্রার আয়োজন হয়েছিল৷জঙ্গল মহলে সঙ্ঘের ১২ টি শাখা সক্রিয়৷হিন্দুদের বাড়ি বাড়ি প্রচার চালাবে বাহিনী৷ সঙ্ঘের মেদিনীপুর বিভাগের সম্পর্ক প্রমুখ উত্তম বেজের কথায় " সঙ্ঘের উদ‍্যোগে হিন্দুত্ব জাগরণের কাজ একশো বছর ধরে চলছে৷ হিন্দু সুরক্ষা বাহিনী সেই প্রচারেরই একটা সদর্থক পদক্ষেপ"৷তবে সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক প্রদীপ কুমার সরকারের কটাক্ষ" হিন্দু সুরক্ষার নামে সম্প্রদায়গত বিভাজন ঘটাতেই সঙ্ঘের এই ভাবনা৷ (আ ,বা প-২৭/০৪/২৫,পৃষ্ঠা-৭)
      মেদিনীপুরের মাটিতে সাধারণত এই বিভাজনের চাষ  একদিনে হয়নি,কার হাত ধরে মেদিনীপুরের মাটিতে হিন্দুত্ববাদের বীজতলা তৈরি হয়েছিল তা জানা দরকার৷
     ঋষি রাজনারায়ণ বসু (১৮২৬-১৮৯৯) ছিলেন হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদের একজন প্রবক্তা এবং হিন্দু মহাসভার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।রাজনারায়ণ বসুর মেদিনীপুর জেলার হিন্দুত্ববাদ এবং হিন্দু সমাজের উপর গভীর প্রভাব ছিল। তিনি হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদ এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদের একজন অগ্রদূত ছিলেন৷তাঁর মৃত্যুর পর ১৯০৬ সালে তার অনুসারীগণ হিন্দু মহাসভা নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন, যা মূলত তাঁর চিন্তাভাবনা ও আদর্শের উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছিল৷তিনি নবগোপাল মিত্রের সঙ্গে  কলকাতায় হিন্দুমেলার পরিকল্পনা করেন। 
IIT খড়গপুর RSS এর আঁতুরঘর কারন IIT কর্তৃপক্ষ হিন্দুত্ববাদী ক্যালেন্ডারটি  ছাপিয়ে আর্য জাতির মহত্ত্ব প্রচার করে ছিল এবং তা প্রকাশ করেছিল ৷IIT ক‍্যাম্পাসে দুজন মুসলিম ছাত্র ফায়জান ও আসিফ কামার  মেধাবী ছাত্রের রহস্যমৃত্যু সঙ্ঘ যোগে সন্দেহ  জাগে ,খড়গপুরে রয়েছে সঙ্ঘ এর বিশাল গোপালী আশ্রম৷
     ফেসবুক পেজ " RSS ডেবরা খন্ড" প্রচার করা হয় যে ,  মহাদশমীর (বিজয় উৎসব)দিনে ডেবরা ব্রীজের নীচে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ ডেবরা খন্ডের তরফে 45 প্রকার বই নিয়ে বুক স্টল চালু হয়৷ডেবরা "সেবা ভারতীর " উদ্যোগেতিলোত্তমা হেল্থ কেম্প হয়৷  RSS এর ডাক্তারদের নিয়ে সংগঠন " আরোগ্য ভারতী" আছে৷ অনেক সময় মুসলিম রুগী দেখবেন না বলে যে সব ডাক্তার বলছেন ,তারা সব এই সংগঠনের সদস্য , সমাজের প্রতিটি স্তরে বিভাজন ঘটিয়ে চলছে ৷যেমন 19 ফেব্রুয়ারি  বালিচক নেতাজি সুভাষ শাখার পক্ষ থেকে গুরুজীর জন্মদিন পালন করেছিল৷ এছাড়া ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি খুলে আলোচনা চলছে RSS  দর্শন নিয়ে৷এগুলো সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট থেকে জানতে পেরেছি৷এই  রকম অনেক ছদ্মবেশী নিরপেক্ষ সংগঠন আছে৷পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নারায়ণগড় ব্লকের
     বাখরাবাদ অবস্থিত" আকন্দ আরএসএসনিকেতন "১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত হয়। সাহায্যবিহীন। এটি গ্রামীণ এলাকায় অবস্থিত। স্কুলটিতে ১ম থেকে ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে৷মিডনাপুর (এমএন) ব্লকে অবস্থিত"সরস্বতী শিশু মন্দির" ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত হয়। 
     বিদ্যালয়টিতে ১ম থেকে ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান করা হয়৷পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগরার ভবানীচকে রাম মন্দির উদ্বোধন সংক্রান্ত একটি সভার আয়োজন করেছিল RSS. সেখানে স্বেচ্ছাসেবকদের ক্লাসও চলছিল। সভায় জানানো হয়, রাম মন্দির উদ্বোধনের দিন এলাকায় বাড়ি বাড়ি ভোগ বিতরণ করা হবে। এসবের মধ্যেই সেখানে হাজির হন এগরা ২ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলি সদস্য চন্দ্রশেখর জানাসহ আরও ২ তৃণমূল নেতা। অযোধ্যায় রাম মন্দিরটি উদ্বোধন করা হয়েছিল 22 জানুয়ারী 2024-এ৷ মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্টা অনুষ্ঠানের সময়  অবিভক্ত মেদিনীপুরে বিভিন্ন জায়গায়(প্রায়  প্রতিটা ব্লকে ব্লকে) মাইক লাগিয়ে এবং লাইভ সম্প্রচার করা হয়েছিল ,মোড়ে মোড়ে গেরুয়া পতাকা ছেয়ে গিয়েছিল৷রিক্স ,বাইক ,গাড়িতে গেরুয়া ঝান্ডা বাঁধা দেখা গিয়েছিল৷একটি উল্লাসের ও ধর্মীয় উগ্ৰতার পরিবেশ দেখা গিয়েছিল চারিদিকে৷ রাজনীতি ও প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা দেখতে দেখতে অবশেষে আমরা হিন্দুত্বের উদযাপনে অভ‍্যস্ত হয়ে পড়েছি৷বঙ্গে নব‍্য রামের প্রবেশ ও বাড়বাড়ন্তের বিষয়টি গুরুতর৷রামনবমীর এই উদযাপন শুরু ২০১৩-২০১৪ সাল থেকে৷ গতবছর প্রতিটি ব্লক স্তরে  রামনবমীর মিছিল ,অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্র সহমিছিল সংগঠিত হয়৷বলার অপেক্ষা রাখে না ,এই মিছিল যতটা ধর্মীয় ,ততটাই শক্তি ,আধিপত্য এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদর্শনের৷ রামনবমী মিছিলকে কেন্দ্র প্রাণ গিয়েছে বেশ কয়েকজনের৷ গ্ৰামস্তরেও বিভাজন সুস্পষ্ট৷ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ঐক্যের গল্প৷২০২৪-২০২৫ সালে এই মিছিলের উপস্থিতি সর্বাত্মক এবং প্রায় সর্বজনীন৷ বিজেপি ক্ষমতায় না এসেও হিন্দুত্বের বিস্তার হয়েছে৷হনুমান মন্দির আজ জঙ্গলমহলের প্রায় সব মন্দিরে বিদ‍্যমান৷ রাজনৈতিক হিসেব দেখলে  ২০১৪ থেকে ২০১৯ এ বিজেপি ঝাড়গ্রামে প্রায় ৩৫%  ভোট বৃদ্ধি ঘটেছে৷ (আ বা প-০৪/০৪/২৫)
     তারপরে আবার এই রকম উম্মাদনা দেখা দিল মহাকুম্ভ মেলা নিয়ে৷অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলাতে  প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ নিয়ে উন্মাদনা তুঙ্গে। গোটা দেশের মতো স্বাধীন ভারতে প্রথম মহাকুম্ভে স্নান করতে পূর্ব মেদিনীপুর থেকেও হাজার হাজার মানুষ গিয়েছেন। আর তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে গেরুয়া শিবির। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের একটি সূত্রের খবর, এ রাজ্যে সবচেয়ে বেশি বাসিন্দা মহাকুম্ভে গিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর থেকে। ব্যাপারে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রতিনিধি তথা কাঁথি সাংগঠনিক জেলার বজরং সংযোজক দীপক বলেন, ‘‘জেলা থেকে দু-শতাধিক বাসিন্দাকে প্রয়াগরাজে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছি।
     এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত গৌরাঙ্গ খাঁড়া বলেন, ‘‘সঙ্ঘ সরাসরি কিছু করছে না। বিভিন্ন যোজনার মাধ্যমে কিছু মানুষ মহাকুম্ভে গিয়েছেন। মহাকুম্ভ নিয়ে একটা আলাদা আবেগ রয়েছে। তার টানেই মানুষ ছুটে যাচ্ছেন।’’ 
আবার আমরা দীঘার দেখলাম এক টুকরো অযোধ্যা ৷দীঘায় জগন্নাথধামে  মন্দির উদ্বোধনে পুরীর মন্দির থেকে ৫৭ জন জগন্নাথ দেবের সেবক এবং ইসকন থেকে ১৭ জন সাধু এসেছিলেন৷ ২৮ এপ্রিল (২০২৫) সোমবার মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিঘায় পৌঁছনোর কথা ৷ ২৯ তারিখে হয়েছে বিশ্বশান্তি উপলক্ষে মহাযজ্ঞ ৷ ১০০ কুইন্টাল আম ও বেলকাঠ এবং ২ কুইন্টাল ঘি পড়ানো হবে ৷ ৩০ এপ্রিল (অক্ষয় তৃতীয়ার পূণ‍্যলগ্নে)মূখ্যমন্ত্রীর  উপস্থিতিতেই মন্দিরের দ্বারোদঘাটন ও জগন্নাথদেবের প্রাণপ্রতিষ্ঠা হল৷ দীঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণের দায়িত্ব ছিল হিডকো৷হিডকো থেকে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল রাজ‍্যের বিরোধী দলনেতা ওভেন্দু অধিকারীকেও৷ ২০০ কোটি ব্যয়ে দিঘায় তৈরি জগন্নাথ মন্দির৷২০১৮ সালে এই মন্দির তৈরির ঘোষণা করেছিল ৷রাজ্য তথা জেলার প্রায় প্রতিটি ব্লক থেকে বাসের ব‍্যবস্থা এবং অনলাইনে মন্দির প্রতিষ্ঠানের লাইভ সম্প্রচার করা  হয় ৷ শুভেন্দু অধিকারী  ৩০শে এপ্রিল ২০২৫ সালে জগন্নাথ মন্দিরের পাল্টা  কাঁথিতে  হাইকোর্টের রায়ে বিজেপির সনাতনী সম্মেলন করেন।এসেছিলেন সেই কর্তিক মহারাজ ৷ জগন্নাথধাম  উদ্বোধন নিয়ে আমীষ খাও বন্ধ বন্ধের মাইকিং হয়েছিল৷স্থানীয় বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি, হিন্দু মহাসভার সংগঠক চন্দ্রচূড় গোস্বামীর মন্তব্যও উল্লেখ করেছেন৷উপস্থিত ছিলেন সস্ত্রীক দীলিপ ঘোষ৷হিন্দু মহাসভাকেও আমন্ত্রণ করা হয়েছিল৷(দীঘার আদি জগন্নাথ মন্দির তৈরি হয় তালপাতা ১৯৮৫ সালে ওল্ড দীঘাতে জগন্নাথ ঘাটের কাছে৷২০০৭ সালে ভেসে আসা  মুর্তি কে প্রতিষ্ঠা করা হয়)দীঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ ২০ একর জমি দিয়েছে মন্দির করতে৷নন্দীগ্রাম কান্ড থেকে ইসকনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন মমতা৷ ২০০৭ সাল থেকে মমতা ইসকনে যাতায়াত করেন এই ইসকন কে দিয়ে তৈরি করেছেন দীঘার জগন্নাথ মন্দির৷জমি আন্দোলন করে উঠে আসা মমতাকে মন্দির বানাতে বাধ্য করালো।
( প্রতিদিন-২৮/০৪/২৫) 
     এই জয় RSS এর বিশাল জয়।RSS এর খালাতো ভাই " ইসকন"৷১৯ টি পরিবার উচ্ছেদ করে মন্দির হয়েছে৷মেদিনীপুর ইসকনের প্রথম কেন্দ্রটি ছিল মেদিনীপুর শহর। এই কেন্দ্রটি সম্ভবত মেদিনীপুর গান্ধীঘাট অঞ্চলে অবস্থিত৷এত কিছু জানার পর জানা উচিত যে হিন্দুত্ব"-র সৃষ্টি বাংলাতেই৷প্রথম "হিন্দুত্ব" নিয়ে বই লেখেন হুগলীর ইংরেজি ভাষার পন্ডিত চন্দ্রনাথ বসু৷ উনবিংশ শতকেই " নবজাগরণ" তা আসলে সংকটে পড়া হিন্দুধর্মকে টেনে তুলতে  কোমর বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাঙালি হিন্দুরাই৷ হিন্দুধর্মের অন্ধ কুসংস্কারগুলি পরিহার করতেও ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাঙালি হিন্দু মনীষীরাই৷রামমোহনের উদ্যোগে সতীদাহ প্রথা বা বিদ‍্যাসাগরের হাত ধ‍রে বিধবা বিবাহের মতো ধর্মের সংস্কার তার প্রকৃষ্ঠ নিদর্শন হয়ে আছে৷ তবে এই নবজাগরণ ছিল উচ্চবর্ণীয় বাঙালির হিন্দুদের মধ্যে ৷ নিম্মবর্ণীয়  ,বা অন‍্যান‍্য বাঙালির নয়৷ তবে বাংলায়  কুসংস্কার বিরুদ্ধে আন্দোলন হলেও এখনো কুসংস্কার আঁতুরঘর বাংলা৷ ধর্মের সংস্কারের যেমন বাংলা থেকেই প্রথম আওয়াজ উঠেছিল ,তেমনি হিন্দুদের সংগঠিত করার প্রয়াসটাও শুরু হয়েছিল বাংলা থেকেই৷ আন্দোলনের ভিত্তিতেই ছিল হিন্দুত্বের ভাবনা ৷স্বাধীনতার সময় বাংলার এক শ্রেণির সংগ্ৰামশীল  জাতীয়তাবাদী দেশ প্রেমিকদের কাছে প্রেরণা উৎস ছিল হিন্দুত্বের ধারনা৷ এর থেকে ভারতের জাতীয়তাবাদে ধর্মীয় করন করা হলো ,ফলে সৃষ্টি হল বন্দেমাতরম গাণ দূগ্গা ঠাকুর কে স্মরণ করে ,বঙ্গমাতা নির্মাণ হল৷সেদিনের বঙ্গমাতা আজকের ভারতমাতা৷সেই হিন্দুত্বের যে রোপন হয়েছিল তা আজকে  বিশাল বটগাছে ধারন করেছে৷ জানতে ও অজান্তেই আমরা সকলেই বটগাছের তলায় আশ্রয় নিয়ে ফেলি৷ কারন বটগাছ যে রাষ্ট্রব‍্যবস্থার একটা অংশ৷সেই প্রাচীন বটগাছ বিশাল ডালপালা ছড়িয়ে একটি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে পরিনত হয়েছে৷ তাই আমরা  অন্তরে ধর্মীয় গোঁড়ামি ও চরম সাম্প্রদায়িকতা দেখতে পায়৷ যেমন সাম্প্রতিক পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া কালীমাতা সঙ্ঘ নামে ক্লাবে লিফলেটে লেখা হয়েছে কোন মুসলিম ছেলে কোন দলে খেলতে পারবে না৷এর আসল উদ্দেশ্য হিন্দু রাজনৈতিক ক্ষমতায়ণের পথ তৈরি করা ৷তাই দেখা যায় ঐতিহাসিক মেদিনীপুর শহরে "তরুণ সংঘ ব্যায়ামাগার" পরিচালিত বর্ণাঢ্য আখড়া বের করে রামনবমীতে৷অবিভক্ত মেদিনীপুরে বিভিন্ন জায়গায় অঘোষিত ভাবে এলাকা চিহ্নিত করা আছে যেখানে মুসলিমদের জায়গা বিক্রি করে না ,ব‍্যবসা করার জন্য দোকান ভাড়া দেয় না ৷যেমন মহিষাদল হয়েছিল এই রকম ঘটনা নিউজ পেপারে প্রকাশিত হয়েছিল৷ পূর্ব মেদিনীপুরে এগরা ও প্রতাপদীঘি তে মুসলমানদের জমি বিক্রি করে না ,দোকান ভাড়া দেয় না ৷ পটাশপুরে সিংদা তে সিপিএম আমলে রানু রায়ের আমল থেকে এই ফরমান জারি আছে৷ আসলে অবিভক্ত মেদিনীপুরের মধ্যে ছোট ছোট হিন্দু হোমল্যান্ড প্রচুর আছে ৷ শুধু মেদিনীপুর নয় ,বাংলা জুড়ে এই চিত্র দেখা যায়৷সিপিএম আমল থেকে থানা জুড়ে কালীমন্দির তৈরি করা তৃনমূল আমলে এর বাড়বাড়ন্ত বেশি হয়েছে ৷ উদাহরণ হিসেবে এগরাতে থানা ছাপিয়ে বিশাল কালী মন্দির হয়েছে ৷পটাশপুরে করার জন্য উদ্দ‍্যোগ নিয়ে ছিল পুলিশ অফিসার ,বটগাছ কেটে পুজো চালু করে দিয়েছিল ,জনগণের প্রতিবাদে তা বন্ধ হয় ,ঘটনাটি ২০২৩ সাল নাগাদ ঘটেছিল৷
     স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব উপলক্ষ্যে আমরা হিন্দু জাতীয়তাবাদের ছায়া দেখতে পেলাম জেলা জুড়ে৷রাজ‍্যের কিছু মেলায় ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ শুরু হয় ,ঐতিহাসিক কাঁথি গান্ধী মেলায় গেট তৈরি হয় হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতি দিয়ে,পটাশপুরে সিংদা বিদ‍্যাসাগর মেলায় ২০২৪ সালে গেট তৈরি হয় জগন্নাথ মন্দির অনুরূপে৷আজ থেকে দশ বছর ও পাঁচ বছর পূর্বে RSS  এর কথা উচ্চারণ করতেন না কেউ ৷  এমনকি রাজনৈতিক মিটিং ,মিছিল ও আলোচনা সভায়৷এখন আলোচনা হচ্ছে কত ভয়ংকর সংগঠন আর এস এস ৷ কি ভাবে সমাজের মধ্যে সন্ত্রাসী চিন্তা চেতনা ,মনোবৃত্তি ছড়িয়ে চলেছে৷ তার পরেও তথাকথিত নিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল ,সেকুলার মুখ ,নিরপেক্ষ সংস্থা ও সংগঠন কেউRSS কে  নিষিদ্ধ করতে আওয়াজ তোলে না৷সাহিত্যিক ,লেখক ,কবি রা সেই ভাবে অশুভ শক্তির  বিরুদ্ধে  ভারতীয় সমাজ কে সচেতন করতে পারেননি৷সামাজিক আলোচনায় আর এস এস এর কথা আনলে আপনাকে হিন্দু বিরোধী মনে করা হত৷ আসলে আর এস এস মানে হিন্দু তারা এই সমার্থক বাইনারি গঠন করতে পেরেছে জনমানসে৷ এই রকম ভাবে হিন্দুত্ববাদী RSS কে বাড়তে দেওয়া হয়েছে৷ সমাজের একদিকে গণতান্ত্রিক ,সেকুলার ,নিরপেক্ষ আন্দোলন  চলছে অন্য দিকে RSSএর জন্য কাজকর্ম নিয়ে চুপ  ছিল সামাজিক নেতা থেকে রাজনৈতিক নেতারা৷গবেষণা করে দেখলে  ভারত  তথা বাংলায় যে আন্দোলন গুলো  হয়ে আসছে সিলেক্টিভ এবং উচ্চবর্ণীয় কেন্দ্রীক  বা উচ্চবিত্ত নেতৃত্বে৷ একটি পাড়ার ক্লাব ,রাজ‍্য ক্লাব ,গণ আন্দোলন , রাজনৈতিক  ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড যাই বলুন সবই উচ্চবর্ণীয়দের নিয়ন্ত্রিত ৷এটা একদিনে তৈরি হয়নি একটু গভীরে ভাবুন উনিশ শতকের নবজাগরণ নিয়ে সকল রহস্য উদঘাটন করতে পারবেন৷ভদ্রলোকশ্রেনীরা সব জানে তবুও সুপ্ত সাম্প্রদায়িকতা গুপ্ত ভাবে রেখেছে ৷ হিন্দু রাষ্ট্রের সূর্য উদয় দেখবে বলে ৷ প্রগতিশীলরা আবার লেখা লেখি করছে RSS এর হৃদয় পরিবর্তন হয়েছে৷আজকে ভারত তথা  বাংলার মাটিতে হিন্দু রাষ্ট্র তৈরির কথা বলে যাচ্ছে সেখানে বাঙালি চুপ৷একমাত্র বাঙালি বীর  সুভাষচন্দ্র বসু যিনি   হিন্দু মহাসভা ,RSS, বজরং দল হিন্দু জাগরণ মঞ্চ,সকল হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিরুদ্ধে আন্দোলন ও সর্তক করে ছিলেন বাঙালি সমাজ কে৷ ১৯৪০ সালে জুন মাসে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু মেদিনীপুরের মাটি ঝাড়গ্রামে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন " সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনীদিগকে ত্রিশূল হাতে হিন্দু মহাসভা ভোট ভিক্ষায় পাঠাইয়াছেন ৷ ত্রিশূল ও গৌরিক বসন দেখিলে হিন্দু মাত্রেই শির নত করে৷ ধর্মের সুযোগ নিয়া ধর্মকে কলুষিত করিয়া হিন্দু মহাসভা রাজনীতি ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে৷ হিন্দু মাত্রেরই তাদের নিন্দা করা কর্তব্য ৷"

কাঁথি শহরে Rss এর মিছিল
তথ্যসূত্র:
১.ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী’র জনসংঘের মেদিনীপুর ও উত্তরাধিকার-ড.চন্দ্রশেখর মন্ডল

২.Election Commission of India. STATISTICAL REPORT ON GENERAL ELECTION, (1952, 1957, 1962, 1967, 1972 & 1977) TO THE LEGISLATIVE ASSEMBLY OF WEST BENGAL

৩.পশ্চিম মেদিনীপুরে বাড়ছে সঙ্ঘ, উৎসাহী বিজেপিও-রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য(আনন্দ বাজার ডটকম)(১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)

৪.রামনবমীতে ছোট কর্মসূচি, ভাবনা সঙ্ঘের-
রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য(আনন্দ বাজার ডটকম)(২০ মার্চ ২০২৫)

৫.সংস্কৃত শিক্ষা সংস্কৃতি না অভিসন্ধি!-অভিজিৎ চক্রবর্তী(আনন্দ বাজার ডটকম )(০৮ নভেম্বর ২০২৩)

৬.জনসংযোগে অস্ত্র মহাকুম্ভ, বাড়তি সতর্ক গেরুয়া শিবির-কেশব মান্না(আ বা ডট কম-০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)

৭. পশ্চিমবঙ্গের সংঘ পরিবার ,সংক্ষিপ্ত রূপরেখা-- সত‍্যজিৎ বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়

ওয়াহেদ মির্জা
ওয়াহেদ মির্জা

কবি ও প্রাবন্ধিক